বেবী মওদুদ আর নেই
সাংবাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ আর নেই।
বেশ কিছুদিন ক্যান্সারে ভুগে শুক্রবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
বেবী মওদুদের বড় ছেলে রবিউল হাসান অভি জানান, বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর ধানমন্ডির ঈদগাহ মসজিদে তার মায়ের জানাজা হবে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে।
রাতে বনানী কবরস্থানে স্বামী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলীর কবরেই দাফন করা হবে বেবী মওদুদকে।
বিকালে বেবী মওদুদের মৃত্যুর খবরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই বান্ধবীর পাশে শেষবারের মতো কিছুক্ষণ সময় কাটান তিনি।
এ সময় বেবী মওদুদের দুই ছেলে রবিউল হাসান অভি ও শফিউল হাসান দীপ্তকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, “বেবী মওদুদ ছিলেন এক সৎ ও সাহসী সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নির্ভীক সংবাদকর্মীকে হারালো।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বেবী মওদুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। তার বাবা আবদুল মওদুদ ছিলেন একজন বিচারপতি। আর মায়ের নাম হেদায়েতুন নেসা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার দিনগুলোতেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ।
১৯৭১ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার আগে ১৯৬৭-৬৮ সময়ে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে যু্দ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন বেবী মওদুদ।
নবম জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরীর কমিটির সদস্য হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
আনুষ্ঠানিক নাম এ এন মাহফুজা খাতুন হলেও সবাই তাকে চিনতেন বেবী মওদুদ নামে। সাদামাটা পোশাকের স্নেহময়ী এই নারী সহকর্মীদের কাছে ছিলেন বেবী আপা।
সাংবদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন বেবী মওদুদ।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- মনে মনে (ছোট গল্প), দুঃখ-কষ্ট-ভালোবাসা (উপন্যাস), নারী ভুবন (কলাম), অন্তরে বাহিরে (কলাম), পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী পাচার, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের নারী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার, নিভৃত যতনে, রোকেয়া টাফ, আমার রোকেয়া, চিরন্তন প্রতিকৃতি রোকেয়া, শেখ মুজিবের ছেলেবেলা, সষি পুষি টুষি (ছড়া), দীপ্তর জন্য ভালোবাসা, টুনুর হারিয়ে যাওয়া, শান্তর আনন্দ, এক যে ছিল আনু, মুক্তিযোদ্ধা মাণিক, কিশোর সাহিত্য সমগ্র ও আবু আর বাবু।
মন্তব্য চালু নেই