লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক
বাংলাদেশ জুট করপোশনের জমি বিক্রি করার অভিযোগে সদ্য কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংসদ ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন এ সংক্রান্ত মামলার অনুমোদন দেয়। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাল কমল চন্দ্র অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে মামলার সুপারিশ করা হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের তিনটি গুদামসহ শূন্য দশমিক ৯৮ একর জমি মাত্র ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। জমিগুলো হলো- নেত্রকোনা জেলা শহরের সাতপাই মৌজায় সিএস খতিয়ান নং : ১৬,১৭,২০; এসএ খতিয়ান নং : ১; সিএস দাগ নং : ১৬০৬, ১৬০৭, ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৭৭১ ও ১৭৭৪ এবং এসএ দাগ নং : ৪৫৭৫- ভুক্ত শূন্য দশমিক ৯৮ একর জমি। এসব জমির মালিক মূলত বাংলাদেশ জুট করপোরেশন। ২০১২ সালের ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিক্রীত জমিটি তৎকালীন ‘জুট বোর্ড অব পাকিস্তান’ পাটগুদাম নির্মাণ করার জন্য অধিগ্রহণ করে। ৪৫৭৫ দাগের ১.০১ একর সম্পত্তি সংস্থার। তবে শূন্য দশমিক ০৩ একর সম্পত্তি রাস্তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি প্রাক্তন জুট বোর্ড বর্তমানে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের (বিজেসি) দখলীয় সম্পত্তি। মোট জমির পরিমাণ ০.৯৮ একর। ওই জমিসহ তিনটি গুদাম মো. তারেক সালমান এবং সুধেন্দু শেখর রায়ের কাছে বার্ষিক ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া ছিল। তারা যৌথভাবে এ সম্পত্তি কেনার জন্য তিনটি গুদামের মূল্যায়িত দর ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৬৭৬ টাকার অধিক মূল্যে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৯ টাকায় ক্রয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
এরপর তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত দেন। যেখানে তিনি বলেন, ‘তিনটি গুদাম ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তদারকির অভাবে এক সময় ভাড়াটিয়া যে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে এগুলোর মালিক বনে যাবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভাড়াটিয়াই উল্লিখিত শূন্য দশমিক ৯৮ একর জমি ক্রয় করতে চাইলে যৌক্তিক কারণে ভাড়াটিয়াই ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন।’ এরপরই ২০০৮ সালের ১৮ জুন বিজেসির সংশোধিত সম্পত্তি বিক্রির নীতিমালায় বিজেসির সব সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
শুধু তাই নয় ১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই তারিখে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক মূল্যায়িত ওই জমির মূল্যের ৩ গুণ ধার্য করে আবেদনকারীদের কাছে শূন্য দশমিক ৯৮ একর জমি বিক্রয়মূল্যে হস্তান্তর করার নিমিত্তে আদেশ প্রদান করেন লতিফ সিদ্দিকী। ওই সময় এ জমির মূল্য ধরা হয় ৫১ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৬ টাকা, যা রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাই প্রতিবেদনে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
ধর্মীয় অনূভুতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা ১০ মামলায় দীর্ঘ আট মাস কারা ভোগের পর গত ২৯ জুন হাইকোর্টের এক আদেশে জামিনে মুক্তি পান লতিফ সিদ্দিকী।
মন্তব্য চালু নেই