যেসব ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ
ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পিছনে ভারতের অবদান সবচেয়ে বেশি।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলে ২০০০ সালে। দেশের মাটিতে ভারতকে পাশে পাওয়া গেলেও ভারতের মাটিতে তাদেরকে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৫ বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ভারতের মাটিতে কোন সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ। তবে অচিরেই ভারত সফরের সম্ভবনা রয়েছে। দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনাও হচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতিতে ভারতের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান যাই থাকুক, দুই পরাশক্তির লড়াইগুলো হয় সবসময় জমজমাট। পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে ভারত। কিন্তু বরাবরই ভারতের ঘাঁড়ে নিশ্বাস ফেলে বাংলাদেশ! দুই দল ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছে ২৯টি। ভারতের ২৫ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় তিনটিতে। একটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি।
দুই দল নিজেদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর। উইলস এশিয়া কাপে চট্টগ্রামে সে ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। খেলেছিলেন আতাহার আলী, মিনহাজুল আবেদিন নান্ন, আমিনুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর শাহের মত ক্রিকেটাররা। কিন্তু ভারতের দিনে বেশি সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে জয় পায় ভারত।
প্রথম ম্যাচের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের জন্যে আরও ১১ ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। অর্থ্যাৎ দুই দলের ১৩তম ম্যাচে বাঘের গর্জনে মাথানত করে ভারত। এরপর আরো দুবার ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
প্রথম জয় (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম):
২০০৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। সে সময়ে ভারতীয় দলের দায়িত্বে সৌরভ গাঙ্গুলী। সে সময়ে ভারত সেরা দল নিয়ে খেলতে এসেছিল। গাঙ্গুলীর সঙ্গে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, অজিত আগারকার। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনীর অভিষেক হয়েছিল এ সফরে।
বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায়, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। তবে প্রথম ওয়ানডেতেই ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ভারত তুলে নেয় ২৪৫ রান । জবাবে বাংলাদেশ ২৩৪ রানে আটকে যায়। ১১ রানের আক্ষেপে পুড়ে গোটা বাংলাদেশ।
তবে সেই আক্ষেপ দুদিনের মধ্যে ভুলিয়ে দেন টাইগাররা। ঐতিহাসিক ২৬ ডিসেম্বর ওয়ানডের প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ১৫ রানে জয় পায় টাইগাররা। জয়ের নায়ক বাংলাদেশের বর্তমান দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। লেট অর্ডারে মাশরাফি ৩৯ বলে ৩১ রান করেন। আর বল হাতেও আগুন ঝরান। ৯ ওভারে ২ মেডেনে ৩৬ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট।
জয়ের দিনে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন হাবিবুর বাশার সুমন। তবে ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। আফতাব আহমেদের ৬৭, মাশরাফির ৩১ ও আশরাফুলের ২৮ রানে ২২৯ রানের লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই স্কোরও যেন ভারতের কাছে ছিল পাহাড়সমান। ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৭.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানেই শেষ ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ।
ওই ম্যাচে খেলেননি টেন্ডুলকার। তার পরিবর্তে খেলেছিলেন শেভাগ। কিন্তু ব্যাট হাতে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। মাশরাফির ২ উইকেটের পাশাপাশি তাপস বৈশ্য, খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ রফিক দুটি করে উইকেট নেন।
দ্বিতীয় জয় (পোর্ট অব স্পেন):
দ্বিতীয় জয়ের জন্যে বাংলাদেশকে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র এক ম্যাচ পরই আসে দ্বিতীয় জয়। তবে প্রায় তিন বছর পর ম্যাচটি হয়েছিল ২০০৭ সালে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পোর্ট অব স্পেনের মাঠে ১৭ মার্চ মুখোমুখি হয় দুই দল। বিশ্বকাপের অষ্টম ম্যাচ।
টসে জিতে ভারতের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মাশরাফির আগুন ঝরা বোলিং আর আব্দুর রাজ্জাক ও রফিকের স্পিন ভেল্কিতে ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র ১৯১ রানে। নির্ধারিত ওভারের আগেই অলআউট ভারত। শেভাগ, টেন্ডুলকার, উথাপ্পা, ধোনি, দ্রাবিড় কেউই বাংলাদেশের সামনে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারেনি। রানের দেখা পান সৌরভ গাঙ্গুলী (৬৬) ও যুবরাজ সিং (৪৭)।
বল হাতে মাশরাফি নেন ৩৮ রানে ৪ উইকেট। আর রফিক ও রাজ্জাক ৩টি করে উইকেট নিজেদের পকেটে পুরেন।
জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম, মুশফিক ও সাকিবের হাফসেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটের বিশাল জয়ে ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয় বাংলাদেশ। তামিম ৫১, সাকিব ৫৩ আর মুশফিক ৫৬ (অপরাজিত) রান করেন। প্রথম ম্যাচের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
তৃতীয় জয় (মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম):
এশিয়া কাপ ২০১২। বাংলাদেশের জন্যে সবচেয়ে সাফল্যের একটি বছর। ওই এশিয়া কাপেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ফাইনালে মাত্র ২ রানের জন্যে ট্রফি বিসর্জন দিতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের আগে যা করার দরকার ছিল তাই করেছিল বাংলাদেশ।
ভারত, শ্রীলঙ্কাকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়েছিল ১৬ মার্চ। টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিতে ভারত বাংলাদেশকে ২৯০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয়। টেন্ডুলকার ১১৪, বিরাট কোহলি ৬৬ ও রায়না করেন ৫১ রান। শেষ দিকে ধোনির ব্যাট থেকে আসে আরও ২১ রান। ম্যাচে খেলেছিলেন আগের দুই ম্যাচের নায়ক মাশরাফিও। ৪৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
২৯০ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে ৭ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। তামিমের ৭০ রান শুরুতেই বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয়। এরপর জহিুরুল ইসলাম অমির ৫৩, নাসিরের ৫৪, সাকিবের ৩১ বলে ৪৯ ও মুশফিকের ২৫ বলে ৪৬ রানে সহজেই জয় পায় বাংলাদেশ। পুরোপুরো এক টিম পারফরমেন্স। তৃতীয়বারের মত টেন্ডুলকার, কোহলি ও রায়নাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জয় পায় বাংলাদেশ। এ ম্যাচ জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান।
আগামী ৭ জুন ঢাকায় আসছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। এ সফরে তিনটি ওয়ানডে খেলবে ভারত ও বাংলাদেশ। ভারত বধের প্রহর গুনছে টিম বাংলাদেশ। মিরপুরের আকাশে আবারও বিজয়ের কেতন উড়াবে বাংলাদেশ। এমনটিই প্রত্যাশা ক্রিকেট ভক্তদের।
মন্তব্য চালু নেই