‘গর্ভাবস্থায় পোষাক সম্পর্কিত সতর্কতা’
গর্ভাবস্থায় রয়েছে পোষাকের যথেষ্ট অবদান। এই সময় দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সাথে বাড়তে থাকে দেহের বিভিন্ন রকম সমস্যা। এই সমস্যাগুলোর সাথে পোষাকের রয়েছে যথেষ্ট যোগাযোগ। পরিবেশ, বয়স, উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী পোষাক, গর্ভাবস্থাকে করে তুলবে যথেষ্ট আরামদায়ক।
গর্ভাবস্থাতে সন্তান জন্মদানের সময় যতোটা এগিয়ে আসে, ততোটাই দেহের ওজন বাড়তে থাকে। তখন সচরাচর পোষাকগুলো মানানসই হয় না। গর্ভাবস্থা বুঝে পোষাক নির্বাচন করলে অনেক শারীরিক অস্বস্তি দূর করার সম্ভব।
পোষাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই যথেষ্ট মনোযোগী হউন। খেয়াল রাখতে হবে, যেন পোষাক একই সাথে গর্ভাবস্থার উপযোগী ও যুগোপযোগী ফ্যাশন সম্পর্কিত হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেকেরই প্রচুর পরিমাণে বমি হয়। এই সময় যতোটা সম্ভব ঢিলেঢালা পোষাক পরুন। সুতি কাপড় হলে সবচেয়ে ভালো।
এই সময়ে পেট তেমন বড় হয় না। তাই যুগের উপযোগী ফ্যাশন সম্পর্কিত সালোয়ার কামিজ, বাসায় ঢিলেঢালা জামা বা ম্যাক্সি পড়তে পারেন। খেয়াল রাখবেন যেন ঘামে ভেজা জামা বা পোষাক পরতে না হয়। এতে দেহে বাসা বাধবে নানান রকম রোগ-জীবাণু।
যা দ্রুত আক্রমণ করবে শরীরকে বা গর্ভস্থ শিশুকে। টেট্রন, নিলেন, জর্জেট, সিল্ক, কাতান, রেশম কাপড় যতোটা বেশী পরিহার করা যায়, ততোটাই ভালো। সুতি কাপড় ত্বককে দিবে আরাম। আরসেই সাথে এই কাপড়ে ঘামের পরিমাণও কমে যাবে। তাই এই সময় সুতিই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পোষাক।
বাসার বাহিরে কর্মজীবি না হলে সুবিধা মতো পোষাক পরিধান ও পরিবর্তন করুন। গরমের দিবে বা ধূলাবালি থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা পরিষ্কার ও আরামদায়ক পোষাক পরুন। রান্না করলে রান্নার তেল মশলা লেগে ঘামে কাপড় ভিজতে পারে। তাই রান্না শেষে পোষাক পরিবর্তন করুন। সব সময় গোসল সম্ভব না।
তাই রান্না শেষে ভালো করে হাত, মুখ ধুয়ে ফেলুন। একদিন কাপড় পড়ার পরে তা অবশ্যই ধুয়ে ফেলুন। আর যারা কর্মজীবি অর্থাৎ বাসার বাহিরে কাজ বা চাকরি করেন, তারা পোষাকের প্রতি আরো মনোযোগী হউন। যদি প্রতিষ্ঠানের পোষাক পরতে হয়, তবে তা যেন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ হয়, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
আজকাল বিভিন্ন বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে ‘প্রেগনেন্সি ড্রেস’ পাওয়া যায়। অর্থাৎ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঢিলেঢালা কামিজ, পায়জামা, ম্যাক্সি, ফতুয়া, টপস পাওয়া যায়। এই ধরণের পোষাক পরুন। কিনতে না পারলে, সুতি কাপড়ের ঢিলা পোষাক বানান।
একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, গর্ভাবস্থায় গেহের গড়ন পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওজন অনেক বেড়ে যায়। তাই পেটে চাপ না লাগে, এমন পোষাক পরুন। যারা প্রতিষ্ঠানের পোষাকে ফুলপ্যান্ট বা জিন্সের পোষাক পরেন, তারা অতিরিক্ত টাইট করে বেল্ট ব্যবহার করবেন না। কিছু পোষাক আলাদা করে ফেলতে হবে গর্ভাবস্থার জন্য, আর কিছু পোষাক রাখতে হবে নবজাতককে খাওয়ানোর জন্য।
যাদেরকে নিয়মিত রিক্সা, বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ীতে যাওয়া আসা করতে হয়, রাস্তার জ্যামে দীর্ঘসময় বসে থাকলে তখন কোমড়ে ব্যাথা হতে পারে। এই জন্য ব্যবহার করুন অ্যাবডোমিনাল বেল্ড (অনফড়সরহধষ নবষঃ)। যা ব্যবহার করতে হয় গর্ভাবস্থার পরে, পেটের আকার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য।
কিন্তু ডেলিভারীর পূর্বেই ব্যবহার করতে পারেন, যাদেরকে প্রচুর পরিমাণে বাসার বাইরে ভ্রমণ করতে হয়। অ্যাবডোমিনাল বেল্ট বা বাইন্ডার ব্যবহার করলে পেট নড়াচড়া করবে কম। তখন ব্যাথা কম লাগবে। দেহের ওজন ও পেটের বৃদ্ধির সাথে সাথে পেট নীচের দিকে ঝুলে পড়ে।
তখন জোরে ঝাকুনি লাগলেই ব্যাথা হয়। তাই বাইন্ডার জার্নির সময় পরতে পারেন। সব সময়ের জন্য না। বাইন্ডার পোষাকের উপর পরলে দেখতে বাজে লাগবে। তাই কামিজ বা জামার নীচে বাইন্ডার পড়–ন। এই জন্য ঢিলা জামা হলে সুবিধা হবে। বাহিরে নিয়মিত যেতে হলে শাড়ীর পরিবর্তে থ্রীপিস পড়–ন। এতে হাটা চলাতে সুবিধা হবে।
সপ্তাহে অন্তত একদিন বাসার সবার কাপড় স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে রোগ জীবাণু মরবে। গর্ভবতী নারীর পোষাক, খাবার, ঘুমানোর জায়গা হওয়া উচিৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এতে রোগ জীবাণু কমবে। লকার বা আলমারিতে উঠিয়ে রাখা কাপড় সর্বদা ধোয়া সম্ভব না।
তাই সপ্তাহে অন্তত দুই দিন রোদে দিন। এতে রোগ জীবাণু মরবে। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় রাখুন আরো ঢিলাঢালা পোষাক। যেন বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে না যান। কামিজ পেটের কাছে ঢিলা করে বানান। ওড়না তুলনামুলকভাবে বড় পড়তে পারেন। ওড়নাতে হাল্কা সুতা, জড়ি বা লেস লাগাতে পারেন কামিজ ও পায়জামার সাথে রং মিলিয়ে। এতে দেখতে সুন্দর লাগবে।
যতোটা সম্ভব পোষাক আরামদায়ক ও ফ্যাশন সচেতন করুন। এতে মন ভালো থাকবে। সুস্থ সবল শিশু জন্মানোর জন্য মন ভালো রাখাটা ভীষণ জরুরী।
মন্তব্য চালু নেই