সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজারের দুটি ক্যাম্পে অবস্থানকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দক্ষিণাঞ্চলের হাতিয়া দ্বীপে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের মিয়ানমার শরণার্থী বিষয়ক সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বাউল এএফপিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতিয়া দ্বীপে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প অবশ্যই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।’

তবে বাংলাদেশ সরকারকে এ পরিকল্পনা বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইসলাম নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক নেতা।

বাংলাদেশ সরকারের এমন পদক্ষেপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের চাওয়া- এখান থেকেই সমস্যার সমাধান হোক।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩২ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন, যারা নিজ দেশ মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের দ্বারা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।

অমিত কুমার বাউল জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কারণে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে। ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর সেখানে হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার পর্যটন খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুটিকে দূরের কোনো এলাকায় স্থানান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুটিকে হাতিয়া দ্বীপে স্থানান্তরের বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হাতিয়া দ্বীপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বদরে ফেরদৌস জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থানান্তরের জন্য হাতিয়া দ্বীপে ৫০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থানান্তরে বাংলাদেশ সরকারের এ পরিকল্পনার আওতায় নেই অনিবন্ধিত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক, যাদের বেশির ভাগেরই বসবাস রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে। অনিবন্ধিত এই রোহিঙ্গা নাগরিকরা খাদ্য বা অন্য কোনো ধরনের সহায়তাও পান না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি- বাংলাদেশ থাকা অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন।

তবে ১৯৯১ সাল থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থানান্তরে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।



মন্তব্য চালু নেই