বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নের ঘটনায়
প্রতিমন্ত্রী-আইজিপির বক্তব্যে অমিল
শাহবাগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্যে অমিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সী।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আইজিপি যে কথা বলেছেন এর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে কোনো মিল নেই। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির একটি রিপোর্ট আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্টে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পয়লা বৈশাখে যৌন নিপীড়ন ও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল না।’
জাতীয় সংসদ ভবনে রবিবার কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন টিপু মুন্সী।
তিনি বলেন, ‘শাহবাগের যৌন নিপীড়ন ও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডসহ সম্প্রতি কয়েকজন ব্লগার হত্যা নিয়ে আলোচনা হয়। আমাদের কাছে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা আছে, এ সব হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশের দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিল না। এরপরও কমিটির পক্ষ থেকে আরও গভীর তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখে যৌন নিপীড়নের পর পুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পয়লা বৈশাখে পুরুষ নারী সেজে দুষ্টুমি করেছে। এখানে কোনো নারী ছিল না।’
এরপর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘পয়লা বৈশাখের ঘটনায় পুলিশের ভিডিও ফুটেজের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পুরোপুরি উলঙ্গ করা হয়নি। এখানে প্রকৃত ঘটনা এখনো জানা যায়নি। তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত শেষে সব পাওয়া যাবে।’ এ বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে দেওয়ার জন্য প্রতিমন্ত্রী অনুরোধ করেন।
দশ বিশিষ্ট নাগরিকের হত্যার হুমকি নিয়েও কমিটিতে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে যে দশ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে তারা কম-বেশি সবার কাছেই পরিচিত। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। পুলিশকে বলা হয়েছে, কোনো ঘটনা ঘটার আগেই তাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর নিরাপত্তা বাড়িয়ে লাভ কি?’
আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের বিষয়ে কমিটিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনা একজন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। এ ছাড়া কমিটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৫০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
বৈঠকে পুলিশ বাহিনীর যানবাহন সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতা অবসানের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে যানবাহন ক্রয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
২৪ নভেম্বরের মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শামসুল হক টুকু, মো. ফরিদুল হক খান, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম, কামরুন নাহার চৌধুরী। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই