পরিবারের সদস্যরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায়
জয়পুরহাটে ১১ দিনেও রহস্যজনক নিখোঁজ জাপানেত্রী
গত ১০দিনেও জয়পুরহাটের রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়া জাতীয় পার্টির(জাপা) নেত্রী রেহেনা বেগমের(৪৭) সন্ধান মিলে নি।
গত ৯মে সন্ধ্যায় তিনি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন। ইতোপূর্বে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল। সে কারনে রেহেনা বেগমের রহস্যজনক নিখোঁজে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।ফলে নিরাপত্তাহীনতায় বাধ্য হয়ে তাদের এখন নিজ বাড়ি ছেড়ে রাত কাটাতে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে ।
আজ মঙ্গলবার দুুপুরে জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে নিখোঁজ মাকে উদ্ধার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে হুমায়ন কবির।
তার বক্তব্যে জানা যায়, গত ৯মে সন্ধ্যায় রেহেনা বেগম জয়পুরহাট শহর থেকে ছেলে হুমায়ন কবিরের জন্য লুঙ্গি ও গেঞ্জি কিনে সে গুলো পশ্চিম পারুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে যান ।ওই সময় তার ছেলে( হুমায়ন কবির) বাড়ির বাইরে ছিল।রাতে মসজিদে এশার নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে এসে আর মা রেহেনা বেগমের দেখা পায় নি। সারা রাত পার হয়ে গেলেও মা আর ফিরে আসেন নি।পাড়া- প্রতিবেশি বা আত্মীয়-স্বজন কেউ তাকে কোথাও দেখেন নি। এ রহস্যজনক ঘটনার একদিন পর ১১ মে পার্শ্ববর্তী একটি আখক্ষেত থেকে নিখোঁজ রেহেনা বেগমের পায়ের এক জোড়া স্যান্ডেল দেখে তা তার মা রেহেনা বেগমের বলে সনাক্ত করে ছেলে হুমায়ন কবির।
প্রতিবেশীদের বাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের অনেকের বাড়িতে মা রেহেনা বেগমকে খুঁজে না পাওয়্য়া ১১ মে সোমবার রাতে জয়পুরহাট সদর থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারন ডায়েরী করে ছেলে হুমায়ন কবির । পরে ১৪মে ওই সাধারন ডায়রীটি মামলা হিসেবে জয়পুরহাট সদর থানায় নথিভুক্ত করা হয় (যার মামলা নং ২৭/২০৮ )। বর্তমানে রহস্যজনক নিখোঁজ রেহেনা বেগমের একমাত্র ছেলে হুমায়ন কবির, বোন আমিনা বেগম,ভাই হাফিজার রহমান সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নিখোঁজ রেহেনা বেগমের ছেলে হুমায়ন কবির, বোন আমিনা বেগম ও ভাই হাফিজার রহমান জানান, কিছু জমি গ্রাস করতে গত ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রেহেনা বেগমের স্বামী সিদ্দিকুর রহমানকে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রেহেনা বেগম বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলা দায়েরর পর থেকে রেহেনা বেগমের ওপর নেমে আসে প্রতিপক্ষের নানা ধরনের অন্যায়-অত্যাচার,হুমকি ধামকি। এরই এক পর্যায়ে ২/৩ বার তাকে বেদম প্রহার করে তার চাচাতো দেবর, একই গ্রামের মৃত মোখলেছার রহমানের ছেলে আবু রায়হান ওরফে রাহেল।
এ ঘটনায় রেহেনা বেগম বাদী হয়ে রাহেলকে আসামী করে জয়পুরহাট সদর থানায় ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।এতে উচ্ছৃংখল রাহেল ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা তুলে নিতে রেহেনাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাননাশের হুমকি প্রদান করে আসছিল। তারই এক পর্যায়ে চলতি ২০১৫ সালের ১৭এপ্রিল দেবর রাহেল আবারো রেহেনা বেগমকে বেদম প্রহার করে। সে সময় গুরুতর আহত অবস্থায় প্রতিবেশীরা তাকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। এই ঘটনার জের ধরে রেহেনা বেগমকে অপহরন করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তার পরিবারের সদস্যদের ।
এ সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ জাপা নেত্রী রেহেনা বেগমের ছেলে হুমায়ন কবির(২৪) ছাড়াও তার বোন আমিনা বেগম(৩৮) , ভাই হাফিজার রহমান(৩৫) ও খালাতো ভাই আফরিদ হাসান(১৯) উপস্থিত ছিল।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট সদর থানা’র অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে। তা ছাড়া তার ওপর হামলার খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিখোঁজ জাপা নেত্রী রেহেনা বেগম কে খুঁজে বের করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য চালু নেই