ছিটমহলবাসীর কষ্ট থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছিটমহলবাসীর আর কষ্ট থাকবে না। তাদের জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ভারতের দালালি করে, আর আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য দাবি আদায় করে। ভারতের আইনসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়া বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠে শনিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের উন্নয়ন করে, আর বিএনপি তা ধ্বংস করে। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত বিদ্যুতের জন্য কানসাটে ১৮ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসের রাজনীতি করে। তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে খালেদা জিয়া আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ঘরে বসে ভালো ভালো খাবার খেয়েছেন। আর সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারী ইউপি সদস্য নূরজাহানের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে বলে নয় বছরের শিশু রকিকে হত্যা করা হয়। তার (খালেদা জিয়া) কাজ মানুষ হত্যা করা। আর ধ্বংসাত্মক কাজ করা।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের উৎপাদন ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ৩ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যেখানে বিদ্যুতের সংযোগ নেই, সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। রাজশাহী-সোনামসজিদ দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাস যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে এবং রহনপুর দিয়ে নেপালের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হবে।
ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশে গড়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন বছরের মধ্যে দারিদ্র্য ১০ ভাগ কমিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটানো হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
সমুদ্রসীমা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভারত ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রসীমা জয় করে এনেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তা পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া শিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন না। তাই তিনি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ দেন। আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ায় বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এসএসসির ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকবান্ধব বলেই মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে এবং কৃষি ভর্তুকির অর্থ সেই ব্যাংক হিসাবে সরাসরি দেওয়া হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আশ্বাস দেন, জেলায় একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল, গৃহহারা মানুষকে খাসজমিতে ঘরের ব্যবস্থা, একটি অত্যাধুনিক উপজেলা কমপ্লেক্স, প্রতি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মঈনুদ্দিন মণ্ডলের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক এমপি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক এমপি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী প্রমুখ।
জনসভাস্থল থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শহরের পিটিআই-মাস্টারপাড়া এলাকায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কল্যাণপুরে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপকেন্দ্র, বালিগ্রামে চক্ষু হাসপাতাল, স্বরূপনগরে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের, গোমস্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, আমনুরায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, কানসাট-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট সড়কের উন্নয়ন ও পদ্মার ভাঙন থেকে আলাতুলি ইউনিয়ন রক্ষা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মন্তব্য চালু নেই