নারায়ণগঞ্জে পাওনা টাকা আদায়ে কোমরে শেকল বেধে আড়াই মাস !
ক্রীতদাস প্রথার ইতিহাস অতি প্রাচীন। যতদূর জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ সালে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম ক্রীতদাস প্রথার চালু। তারও হাজার খানেক বছর পর থেকে এই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে মিশর আর ভারতে। তারও অনেক অনেক পরে চীনে জাঁকিয়ে বসে অমানবিক এই প্রথা । ৮০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসে এবং ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে শুরু হয়।
আতকে ওঠার মতই বিষয়টি ! একবিংশ শতাব্দীতে এসে সামান্য পাওনা টাকার জন্য একজন তরুন শ্রমিকের পায়ে শেকল বেধে মাসের পর মাস টাকা আদায়ে দিবা-রাত্রী কাজ করানোর মত অমানবিকতা ! আপনার/আমার বিশ্বাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই সভ্য সমাজে তাও আবার খোদ এই বাংলাদেশেই দিনের পর দিন চলে আসছে এই নির্মমতা ! নির্মম এই ছবিটি ইতমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার তৈরি করেছে।
আমরা জানি পায়ে আর কোমরে শেকল বেঁধে কাজ করানোর ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে শত শত বছর আগেই। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো রাষ্ট্রে গৃহপরিচারিকাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা হয় বলে মাঝে মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে খবর হয়। কিন্তু খোদ বাংলাদেশেই কোমরে শিকল বেঁধে ক্রীতদাসের মতো শ্রমিক খাটানো হচ্ছে- এ খবর ক’জনে রাখেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এমনই একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে কোমরে শিকল বেঁধে আড়াই মাস যাবৎ কাজ করতে বাধ্য করিয়েছেন এক মিল মালিক। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে ওই শ্রমিকের এমন অবস্থা দেখে রীতিমতো হতবাক হয়েছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ স্থানীয়রা।
আড়াইহাজার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলা সদরের শিবপুর গ্রামের মৃত রহমানের ছেলে সোহেল তার রোলিং মিলে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩ বছর যাবৎ পাওয়ারলুম মেশিনের পার্টস সামগ্রী তৈরি করে আসছিল।
বিষয়টি টের পেয়ে তিতাস গ্যাসের সোনারগাঁও (আবিকা) অফিস কর্তৃপক্ষ বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে অভিযান চালায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শরিফুল হক। এ সময় তারা মিলের মধ্যে আনোয়ার হোসেন (২৫) নামের এক শ্রমিককে কোমরে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, শ্রমিক আনোয়ার ৩ মাস আগে মিল মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল। টাকা না দিয়ে চলে যেতে পারে ভেবে শিকল দিয়ে বেঁধে কাজ করানো হচ্ছিল তাকে। শিকল পরা শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বগুড়া সদর থানার কর্মপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আ. মজিদের ছেলে।
পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয় এবং মিল মালিক সোহেলকে না পেয়ে মিলের কর্মকর্তা সোহেল (২০) ও নান্নু হাওলাদারকে (৪৫) গ্রেফতার করে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ সময় মিলটি সিলগালা করে দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, মিল মালিক একই সঙ্গে ২টি অভিযোগে অভিযুক্ত। প্রথমত, তিনি চুরি করে গ্যাস সংযোগ নিয়ে কাজ করছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি একজন শ্রমিককে আড়াই মাস যাবৎ কোমরে শিকল বেঁধে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কাজ করতে বাধ্য করেছেন। এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানায় মামলা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই