সংবাদ মাধ্যমে ৩২গুণ শক্তিশালী ভূ-কম্পনের সম্ভাবনার খবর : আসল ব্যাপারটা কী ?

হিমালয়ের ইউরেশীয় প্লেট থেকে নেপালের সাম্প্রতিক ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে ৩২ গুণ শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প ধেয়ে আসছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ভারত এবং বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করতে আগ বাড়িয়ে ব্যবহার করেছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার উদ্ধৃতি, ইউএসজিএস-এর সাইটে গিয়ে যার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। সবমিলে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের বরাতে এ সংবাদটি প্রকাশ করা হলেও ভবিষ্যতে আঘাত হানতে যাওয়া ভূমিকম্পটি যে ৩২গুণ বেশি শক্তিশালী হবে কিংবা এরকম ভূমিকম্প যে আঘাত হানবেই তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি ।

ভারতের হায়দারাবাদভিত্তিক ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক হার্শ কে. গুপ্তর বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টাইমস, সেইসময়সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প-সহ এই কয়েকদিন যা কম্পন আমরা অনুভব করেছি, তার অন্তত ৩২ গুণ শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতেই। অর্থাৎ, নেপালের কম্পনের মতো ওই রকম ৩২টি কম্পন মিলিয়ে যতটা শক্তিশালী হয়, সেরকমই ভূমিকম্প হবে শিগগিরই।

অথচ হার্শ কে. গুপ্তর বক্তব্য অনুযায়ী অঞ্চলটিতে এখনও যে পরিমাণ ভূমিকম্প উৎপত্তির শক্তি সঞ্চিত আছে তা ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মত ৩২টি ভুমিকম্প ঘটাতে সক্ষম। এখন সে সঞ্চিত শক্তির কারণে এককভাবে বেশি মাত্রার কম্পনও অনুভূত হতে পারে আবার তা ছোট ছোট বিভিন্ন ভূমিকম্পে ভাগ হয়ে সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিতে পারে। আর দ্বিতীয়টিই তুলনামূলকভাবে মঙ্গলজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হার্শ গুপ্ত জানান, ‘ মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্পের যে শক্তি সঞ্চিত আছে তাতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মাত্র ৫ শতাংশ শক্তি নির্গত হয়। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি ৮ মাত্রার চেয়ে ১০ গুণ বড় হলেও তুলনামূলকভাবে ৩২ গুণ শক্তি নির্গত করে। আর নেপালে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার যে ভূমিকম্পটি হয়েছে তাতে ১শ’ টন টিএনটি পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়েছে।’

আইআইটি খাগরাপুরের বিশেষজ্ঞ শংকর কুমার নাথ বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত আছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সম্ভব। তবে ওইরকম একটি ভূমিকম্প না হয়ে এখন যেভাবে হচ্ছে অর্থাৎ ৭ দশমিক ৯ মাত্রার কয়েকটি ভ’মিকম্পের মধ্য দিয়ে সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে যাওয়াটা তুলনামূলকভাবে কম ধ্বংসাত্মক। তবে ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্প ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ৪০-৫০টি ভূমিকম্পের সমকক্ষ।

তবে এই দুই বিশেষজ্ঞের বক্তব্যকে ব্যবহার করে অতিরঞ্জিত শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। সেখানে কেবল একটি ৯ মাত্রার তথা ৩২ গুণ শক্তিশালী ভ’মিকম্পের কথাকেই জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তবে শক্তিশালী কিংবা কম শক্তিশালী সব ধরনের ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরজন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনার জোর দিয়েছেন তারা। জাপানের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, সেখানে এখন ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনেকটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেলেও তা ভালোভাবে মোকাবেলা করছে দেশটি।

বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলির একটি মানচিত্র তৈরি করেছে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার বরাতে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয় আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ৮ মাত্রার ভ’মিকম্প হতে পারে ক্যালিফোর্নিয়ায়। ইউএসজিএস’র মতে, প্রবল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে নেপাল, ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ।

নেপালে খুব শিগগিরই ভূমিকম্প হতে পারে বলে গেল ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করেছিল মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে। কিন্তু নেপাল সরকার বিষয়টিকে আমল দেয়নি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়নি। রিপোর্ট বলছে, গত ২০৫ বছরের ইতিহাসে কাঠমান্ডুতে এটাই পঞ্চম শক্তিশালী কম্পন।



মন্তব্য চালু নেই