চাঁদপুরে তিন বছরেও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান প্রকল্পের চূড়ান্ত তালিকা হয়নি
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও শাহ্রাস্তি উপজেলায় তিন বছরেও অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্ধকৃত বাসস্থানের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। একাধিক সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দলাদলি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও উপজেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত তালিকায় এমপির খবরদারির কারণে চূড়ান্ত তালিকা হয়নি। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
তবে দুই উপজেলার কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানাগেছে, মাসখানেক আগে শাহ্রাস্তি উপজেলার চূড়ান্ত তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। আর হাজীগঞ্জের তালিকা জেলায় পাঠানো হলেও এমপি সাহেবের নির্দেশে ওই তালিকা ফেরৎ পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২ ফেব্র“য়ারী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে উপজেলায় অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মানের লক্ষ্যে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুতের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে (ইউএনও) সভাপতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ-সভাপতি, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, প্রাথমিক অথবা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর একই মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী প্রধান উপজেলা কমিটি থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সদস্য সচিব করে চার সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়। জেলা কমিটি চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রনালয়ে পাঠাবে।
উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্ধকৃত বাসস্থানের আকার আকৃতি চার কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেড পাকা ভবন। সাথে একটি আর্সেনিক মুক্ত টিউওবয়েল থাকবে। প্রতিটি ভবন নির্মানের জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে প্রায় নয় লাখ টাকা। ২০১২ সালে এ প্রকল্পের জন্য হাজীগঞ্জ উপজেলা ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাজীগঞ্জের ইউএনও শেখ মুর্শিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমান্ডার মজিবুর রহমান মজুমদার ও সাবেক কমান্ডার আবু তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে সরজমিনে ১৫ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি গিয়ে যাচাই করেছি। সেখান থেকে আমরা ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা ডিসি স্যারের কার্যালয়ের পাঠিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এমপি স্যার ওই তালিকা জেলা থেকে ফেরৎ এনেছেন। এখন শুনেছি লটারির মাধ্যমে আবার তালিকা হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কমান্ডার মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, জেলা কমান্ডার আপত্তি করায় জেলা থেকে তালিকা ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে ইউএনও সাহেব আমাকে জানিয়েছেন। এখন জেলা কমান্ডার ও এমপি সাহেব লটারির ব্যবস্থা করুক। তিনি আরো বলেন, বিগত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তিরা এ তালিকা নিয়ে সমস্যায় পড়ছে। ২০১২ সালে এ তালিকা হওয়ার কথা ছিল। তারা দুই বছর ক্ষমতায় থেকে তালিকা করতে পারেনি। এখন আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছেন।
শাহ্রাস্তি উপজেলা কমান্ডার রুহুল আমিন বলেন, আমরা মাস খানেক আগে উপজেলা থেকে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করে জেলায় পাঠিয়েছি। তালিকা করতে এত সময় লাগল কেন সে প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন বলেন, এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপের কারণে কয়েকবার তালিকা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ ওয়াদুধ বলেন, শাহ্রাস্তির তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। হাজীগঞ্জের তালিকা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। এখন আবেদনকারীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। এমপি সাহেবও লটারির মাধ্যমে তালিকা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই