‘আমি বেঁচে আছি মা’: থাইল্যান্ডের গণকবরে জীবিত উদ্ধার বাংলাদেশি আনুজার

থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার সীমান্তে গভীর জঙ্গলের গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি তরুণ আনুজার (২৮) দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু কীভাবে সে দেশে ফিরবে তা জানে না। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও কেউ তিনদিনে যোগাযোগ করেনি। তাঁর বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়নি। সে তাঁর বাড়ির লোকজনকে তাঁর এই করুণ পরিণতির কথা আগে জানানোর কোনো সুযোগ পায়নি।

থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম বিশেষ করে ব্যাংকক পোস্ট এবং ফুকেট নিউজ আনুজারের ছবিসহ তাঁর কথা বড় করে তুলে ধরছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও তোলপাড় তাঁকে নিয়ে। সে জানিয়েছে বাংলাদেশের নরসিংদিতে তাঁর গ্রামের বাড়ি।

আনুজার এখন থাইল্যান্ডের দক্ষিণের শহর পেডাং বেসার-এর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফুকেট নিউজ-কে আনুজার জানায়, কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত থেকে নয় মাস আগে মানব পাচারকারীরা তাঁকে অপহরণ করে। এরপর মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দেয়ায় তাঁকে নদী পথে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে বসেও তাঁর কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ দেয়। সে জানায়, ‘আমি কখনোই আমার পরিবারের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারিনি। যোগাযোগ করিনি।’

‘কিন্তু আমি এখন যোগাযোগ করতে চাই, মা-বাবাকে আমি বেঁচে থাকার কথা জানতে চাই। বলতে চাই- আমি বেঁচে আছি মা।’ -বলেন তিনি।

থাই কর্তৃপক্ষ শুক্রবার যখন সাংগালা প্রদেশের গভীর জঙ্গলে গণকবরে অভিযান চালায় তখন মানব পাচারকারীরা আনুজারকে মৃত ভেবে ফেলে গিয়েছিল। আর আনজুর কখন ক্ষুধা তৃষ্ণায় মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল।

হাসপাতালে আনুজার জানায়, ‘নয় মাস আমাদের বন্দি রাখে গভীর জঙ্গলে মুক্তিপণের জন্য। যখন বুঝতে পারে মুক্তিপণ পাওয়া যাবেনা তখন খাবার দেয়াও বন্ধ করে। অনেকেই মারা গেছেন না খেয়ে।’

সে জানায়, তাঁর সঙ্গে নিয়ে আসা ১০ বাংলাদেশি মারা গেছে। তাদের মধ্যে ওসমান, বেলাল, শহীদ এদের নাম মনে আছে। আটজন পাচারকারী তাদের জঙ্গলের ক্যাম্পে বন্দি করে রাখে। তাদের মধ্যে আহমেদ আলি, আনোয়ার ও শরিম ইদার নাম সে জানে। এরইমধ্যে থাই পুলিশ মূল হোতাসহ চারজনকে আটক করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতবাস এরইমধ্যে সেখানকার সামাজিক উন্নয়ন এবং মানব নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা আনুজারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এপর্যন্ত থাইল্যান্ডের গণকবর থেকে ২৬টি মৃতদহে উদ্ধা করা হয়েছে। বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বন্দি রাখার ১০০ ক্যাম্প চিহ্নিত করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই