আল কায়দা ও আনসারুল্লাহর যোগসূত্র খুঁজছে পুলিশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত আল কায়দার অঙ্গসংগঠন হিসেবে বাংলাদেশের আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কাজ করছে কিনা— সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, আল কায়দার সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটির নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখার তথ্য তাদের হাতে রয়েছে।

মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়সহ তিনজন ব্লগারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়দার বিবৃতির পরই আন্তর্জাতিক এই সশস্ত্র সংগঠনটির সাথে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

মনিরুল ইসলাম জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা কেউ কাউকে চেনে না। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ নেই মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের। ফলে আল কায়দার হয়ে আনসারুল্লা বাংলাটিমের সদস্যরা কাজ করলেও তাদের বেশিরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

তিনি জানান, ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনেক সদস্য চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের প্রথম দিকেই আল কায়দার সাথে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতা থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।

অভিজিৎ রায় হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়দার ভিডিও বার্তা সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আন্তর্জাতিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আল কায়দার একটি ঘনিষ্ঠ সংগঠন। আল কায়দার যাবতীয় মতাদর্শকে তারা অনুসরণ করে। তবে এটি আল কায়দার অঙ্গসংগঠন কিনা— সে ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য নাই। ২০০৯ সালের দিকে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এগুলো নিয়ে আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হচ্ছে।

‘প্রাথমিক পর্যায়ে নিশ্চিত হতে হচ্ছে, ভিডিও বার্তা প্রকাশকারী ব্যক্তিটি কে? তার সঙ্গে আল কায়দার সম্পৃক্ততা কতটুকু? এ সব তথ্য বের করা হলেই বাকি রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পাঁচজনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একটা সংগঠন হিসেবে ধরি। এরাই বিভিন্ন সময় এই হত্যাকাণ্ডগুলো করেছে। ইতোপূর্বে এদের একাধিক প্রমাণও রয়েছে। যেগুলো আমাদের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বই মেলা থেকে ফেরার পথে খুন হন বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। ঘটনার পর দায় স্বীকার করে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি সংগঠন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করতে বাংলাদেশে আসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল।

অভিজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফারাবি শাফিউর রহমান নামে ইসলামপন্থী এক ব্লগারকে গ্রেফতারও করা হয়। এ হত্যার ঘটনার দুই মাসের বেশি সময় পর দায় স্বীকার করে বক্তব্য প্রকাশ করে আল কায়দা।

এ ছাড়া ব্লাগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে হাতেনাতে ধরা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তারা আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ও ফেসবুকে ইসলামবিরোধী লেখালেখির কারণে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ এখন পর্যন্ত সংগঠনটির নেতৃস্থানীয় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

তবে পুলিশের দাবি, সংগঠনটির বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে।

ডিবি সূত্র বলছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম দেশে সবগুলো জঙ্গি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জঙ্গিরা আনসারুল্লাহর নাম ধারণ করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পাহাড়ি এবং নির্জন এলাকায় তাদের প্রশিক্ষণও হয়। এদের লক্ষ্য দেশের কোনো এক এলাকাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে সশস্ত্র অবস্থান নেওয়া। পুলিশের হাতে আটক জসিমউদ্দীন রাহমানি সংগঠনটির সমন্বয়ক। সামরিক কমান্ডার হিসেবে রয়েছেন সেনাবাহিনীর থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। অর্থ সংগ্রাহক পাকিস্তানে বসবাসরত বাংলাদেশী ইজাজ হোসেন।

ডিবি সূত্র আরও বলছে, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান ও আল কায়দার জসিমউদ্দীন রাহমানির কাছে টাকা পাঠাত। আর এই অর্থেই পরিচালিত হতো সংগঠনটির কর্মকাণ্ড।



মন্তব্য চালু নেই