চোখের কারণে মাথা ব্যথা- দায়ী ৫টি কারণ

আজকাল খুব মাথা ব্যথা করছে? ভাবছেন মাইগ্রেন বা অন্য কিছু হয়েছে? আপনার এই ধারণা কিন্তু সত্য নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে যে মাথা ব্যথাটি করছে চোখের কারণে। অনেকে ভাবেন কেবল চোখের পাওয়ারের গরমিল হলেই বুঝি ম্যথা ব্যথা হয়। সেটাও কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। চোখের আরও অনেক গুলো সমস্যার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে, যেগুলো আসলে খুবই কমন। আসুন, জেনে নেই সেইসব সমস্যার ব্যাপারে।

চোখের যেসব সমস্যায় মাথাব্যথা হয় সেগুলো হচ্ছে- চক্ষু গোলকের নিজস্ব রোগ, চোখের প্রেসার বৃদ্ধি, চোখে আঘাতজনিত সমস্যা, চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যা, চোখের মাংসপেশির সমস্যা।
চক্ষু গোলকের রোগ-

চক্ষু গোলকের নিজস্ব রোগ বলতে বুঝি সাধারণত বিভিন্ন রকম প্রদাহ। এসব প্রদাহ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণে সৃষ্ট। এসব ক্ষেত্রে মাথাব্যথার সঙ্গে চোখের ব্যথা থাকবে। কখনো কখনো চোখের ব্যথা তীব্রতায় মাথাব্যথাকে ছড়িয়ে যায়। আর মাথা এবং চোখ ব্যথার পাশাপাশি চোখ লাল হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখ থেকে পানি পড়া ইত্যাদি অবশ্যই থাকবে। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো যেমন, চোখের পাতার রোমকূপের প্রদাহ কর্নিয়ার প্রদাহ বা কর্নিয়ায় ঘা, নেত্রনালির ইনফেকশন, চোখের কোনো বস্তু (ফনের বডি) ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে চোখের ব্যথা। ওইদিকের মাথাব্যথা থাকতে পারে, তবে চোখের উপসর্গগুলোই প্রধান।
চোখের উচ্চচাপ বা গ্লুকোমা

গ্লুকোমা অনেক রকমের হয়। কিছু কিছু গ্লুকোমার ধরন রয়েছে সেখানে চোখ প্রচণ্ড ব্যথা হয়, চোখ লাল হয়ে যায়, ঝাপসা হয়ে যায় ইত্যাদি। এসব গ্লুকোমার আক্রমণে চোখের দিকের মাথার অংশেও ব্যথা হয়। ব্যথাটা প্রচণ্ড, সঙ্গে বমিও হয় সাধারণত অনেক সময় এ ধরনের গ্লুকোমার রোগী মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়ে মাথাব্যথা আর বমি নিয়ে বিচক্ষণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নিজেই চোখের সমস্যা ধরে ফেলতে পারেন, তখন তিনি রোগীকে পাটিয়ে দেন চক্ষু চিকিৎসকের কাছে। আরেক ধরনের গ্লুকোমা আছে যেখানে চোখে ঝাপসা, লাল বা ব্যথা কিছুই হয় না, শুধু চশমার প্রতি অসহনশীলতা। দেখা যায়, নতুন চশমা নিলে কিছুদিন ভালো চলে_ পরে ওই চশমায় আর চলছে না_ একটু ঝাপসা হয়ে আসছে আরে একটু একটু মাথাও ব্যথা হচ্ছে_ব্যথাটা হচ্ছে মাথার সামনের দিকে, কপালের ওপরে বিশেষ করে কোনোকিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ার সময়। রোগী চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যান চিকিৎসক চশমা পাল্টে দেন_ আর কিছুদিন ভালো আবার তথৈবচ। এমন অবস্থায় চোখের উচ্চচাপের কথাটি বিশেষজ্ঞের মাথায় থাকা উচিত।
চোখের আঘাত

চোখের যে কোনো ধরনের আঘাত তা সে ধারালো বস্তু দিয়েই হোক বা ভোঁতা শক্ত বস্তু শক্তি দিয়েই হোক চোখ এবং চোখের দিকে মাথার অংশে ব্যথা হবে। চোখে কোনো বস্তু (ফরেন বডি) পড়লে তা থেকেও চোখ এবং মাথাব্যথা হয়।
চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যা

অনেক ক্ষেত্রে চোখের পাওয়ারের সমস্যা প্রকাশ পায় মাথাব্যথা দিয়ে। সাধারণত মাথার সামনের দিকে কপালের উপরিভাগে এবং দু’দিকে ব্যথা হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ভালো, আস্তে আস্তে সকাল পেরিয়ে দিন যত গড়ায়, কাজের ব্যস্ততা যত বাড়ে মাথাব্যথা আস্তে আস্তে তত মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। সঙ্গে একটু বমি বমি ভাব অথবা মাথা ঘুরানো থাকতে পারে। এসব উপসর্গ দিনের শেষভাগে বাড়ে রাতে ঘুমিয়ে সকালে ওঠে আবার ভালো। আবার দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথাব্যথাও জেগে ওঠে। তবে সপ্তাহান্তে ছুটির দিন স্কুলে পড়া নেই, অফিসের ফাইলে নেই মাথাব্যথা। এসব ক্ষেত্রে একটু একটু আন্তরিকতার সঙ্গে ধৈর্য ধরে রোগীর সমস্যা শুনলে যে কোনো ডাক্তার বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। রোগীকে প্রয়োজনীয় চশমার পরামর্শ দিলে অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের মাথাব্যথা সরে যায়। অনেক চোখে ঝাপসা বা কম দেখেন এবং বিশেষ করে চলি্লশোর্ধ্বরা কাছের কোনো লেখাপড়ার সময় ঝাপসা দেখেন কিছুক্ষণ পড়ার পর আস্তে আস্তে মাথা ধরে যায়। চশমাই এসব মাথাব্যথার মোক্ষম অস্ত্র। শিশুরা অনেক সময় মাথাব্যথা বলে, স্কুলে যেতে চায় না, পড়তে বসে মাথাব্যথায় কাঁদে। অভিভাবকরা প্রথমেই বাচ্চার পড়ার ফাঁকি দেয়ার কথা না ভেবে চোখের সমস্যার কথা ভাবুন ঘুরে আসেন একবার কাছের চক্ষু ডাক্তারের কাছ থেকে কোনো কিছু না পাওয়া গেলে আপনি ভাবতে পারেন যা ভেবেছিলেন।
চোখের মাংসপেশির সমস্যা

দুটি চোখে সবসময় সমভাবে একই দিকে ঘুরে এভাবেই সব অবস্থানেই সমান্তরাল অবস্থা ধরে রাখে। এজন্য সাহায্য করে আমাদের চোখের দুটি মাংসপেশি এবং এদের সুবিন্যস্ত নার্ভ সাপ্লাই। কোনো কারণে চোখের এ মাংসপেশির সমান্তরালতা নষ্ট হলে ওই ব্যক্তি দুই চোখে একটি বস্তুকে দুটি দেখবে। এটিকে ডিপ্লোপিয়া বলে। এ বড় যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা। তখন মাথাব্যথা, ঘোরানো ইত্যাদি উদ্ভব ঘটে। আবার মস্তিষ্কে অনেক সময় টিউমার বা সেরকম কিছু হলে ওই টিউমারের কারণে রোগীর চক্ষু মাংসপেশি দুর্বল হয়ে ডাবল ভিশন বা দ্বৈতদৃষ্টি এবং মাথাব্যথা একসঙ্গে হতে পারে। মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে মাথাব্যথা হয় সাধারণত সকালে বেশি বসা থেকে উঠতে গেলে বা কাশি দিলে মাথাব্যথা বাড়ে। অনেক সময় হঠাৎ বমি হয়ে যায়। এরকম উপসর্গ পেলে বা হঠাৎ দ্বৈতদৃষ্টি শুরু হলে দেরি না করে অবশ্যই চক্ষু ডাক্তার দেখান হয়তো এখনো অনেক দেরি হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই