যে স্কুলে খেলার সাথী ‘বাজপাখি’ !
মধ্য স্লোভাকিয়ার একটি গ্রামের স্কুলে সাত থেকে নয় ক্লাসের ছেলেমেয়েদের একটি অভিনব বিষয় নিয়ে চর্চা করতে হয়। আর তা হলো ফ্যালকনরি বা বাজপাখি পোষা৷ সখের নয়, বাধ্যতামূলক বিষয়৷
স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে গ্রামটি কিছু অন্য ধরনের৷ মধ্য স্লোভাকিয়ার স্টিয়াভনিৎসা পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গ্রাম৷ দেখতে ছিমছাম, নিরিবিলি – কিন্তু একটু রহস্যময়৷ এখানকার স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলার সাথী হলো বাজপাখি!
বারো বছরের সারা বলে, প্রথমে আমার পাখিগুলোকে দেখলে ভয় করতো৷ আজ আর ভয় করে না, ঈগল পাখি দেখলেও নয়৷
স্কুলের প্রধান পাভেল মিশালের কীর্তি : তিনিই শিকারি পাখিদের স্কুলের পাঠ্যবিষয় করেছেন৷ এই বিচিত্র পন্থায় স্কুলটিকে বাঁচিয়েছেন৷ এই স্কুলে ‘ফ্যালকনরি’ বা বাজপাখি পোষা সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয়৷
খুদে পড়ুয়াদেরও উৎসাহ কম নয়৷ পাভেল বলেন, ছাত্রছাত্রীরা পাখিদের দায়িত্ব নিতে শেখে, কেননা তাদের প্রতিদিন পাখিদের জন্য কাজ করতে হয়, এমনকি ছুটি থাকলেও৷ তারা সিদ্ধান্ত নিতে শেখে, ধৈর্য ধরতে শেখে – কেননা তারা জীবন্ত পশুপাখিদের নিয়ে কাজ করছে৷ এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷
শিকারি পাখি পোষা সম্পর্কে শিখতে হবে : যেমন তাদের সাজসরঞ্জাম৷ কীভাবে তাদের ধরতে কিংবা রাখতে হয়৷ সারা দেখাচ্ছে, বাজপাখিকে কী ভাবে ‘টোপর’ পরাতে হয়৷ মার্কিন ‘বল্ড ঈগল’ নিক্সন কিন্তু তাতে বিশেষ সুখি নয়৷ সারা তাকে বুঝিয়ে দেয়, এখানে কার কথা চলবে!
স্কুলের আজ নিজস্ব চল্লিশটি বাজপাখি আছে৷ কয়েকটি পাখির দাম পাঁচ হাজার ইউরোর বেশি৷ সবচেয়ে ছোটরা প্যাঁচাদের দেখাশুনো করে, একটু বেশি বয়সের ছাত্রছাত্রীরা দেখে শকুনি, বাজপাখি আর শিকারি বাজদের৷
পাভেলের মতে, সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে পড়ে, খাবারটাকে কীভাবে ঠিক করে দস্তানার ওপর রাখতে হয়৷ পাখিদের শুধু মাংসটা খাওয়ার কথা, হাতে কামড় দিলে চলবে না৷
সারা বলে, পাখিটা শিকারি পাখি হওয়া সত্ত্বেও আমি তাকে যা শিখিয়েছি, যখন ঠিক তাই করে, তখন দারুণ লাগে৷
প্রকৃতি আর মানুষের নৈকট্য, সান্নিধ্য, এই হলো স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে স্কুলের বৈশিষ্ট্য৷ এই অঞ্চলে মধ্যযুগ থেকে সোনা আর রুপার খনি ছিল৷ আজ তা লোপ পেলেও এলাকাটি ইউনেস্কোর কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এখানকার ৮০০ বাসিন্দা পর্যটন শিল্প, কাঠ খোদাইয়ের কাজ আর বনবিভাগ থেকে জীবিকা অর্জন করেন৷ অনেকে আবার বেকার৷
কাজেই গ্রামটির ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে৷ পাভেল মিশালের পরিকল্পনাটা ছিল সে রকম একটা সূচনা– অসাধারণ, অথচ এই এলাকার জন্য স্বাভাবিক৷ প্রকৃতিকে স্কুলের ক্লাসরুমে নিয়ে আসা – শিকারি পাখি হিসেবে৷ পাভেল ব্যবহারিক জীবনকেও জানেন৷
তিনি বলেন, ফ্যালকনরি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে পারে, তারা বিমানবন্দরে কাজ করতে পারবে, ব্রিডারদের কাছে অথবা পাখির প্রদর্শনীতে৷ স্লোভাকিয়ায় কাজ না পেলে বিদেশে কাজ খুঁজতে পারবে৷
সারা ইউরোপে তাদের পাখিদের নিয়ে ‘প্রেজেন্টেশন’ করেছে স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে – শিকারি বাজের মাধ্যমে যা কিনা আমিরাতের শেখদের প্রিয় শিকারি পাখি৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে
মন্তব্য চালু নেই