১১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙতে আসছে তীব্র দাবদাহ

দেশ জুড়েই বইছে দাবদাহ। খরতাপে পুড়ছে চারপাশ। অসহনীয় তাপ আগুনের হলকা হয়ে বিঁধছে শরীরে। ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে দেশ। অগ্নিচুল্লির মতো জমা হচ্ছে দাবদাহ। দিনের বেলা তা অনেকটা লু হাওয়ার মতো এসে জ্বালা ধরাচ্ছে নগরবাসীর শরীরে।
সূর্য ডোবার পরও তাপমাত্রা তেমন একটা কমছে না, শীতল হচ্ছে না চারপাশ। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুর্বল মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ এবং বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় সারা দেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন থেকে খরতাপে পুড়ছে চারপাশ। বইছে দাবদাহ। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে- যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ মংলায় ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোরকাস্টিং অফিসার (ডিএফও) আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, নিয়মিত বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না। এ বছর আবহাওয়া কিছুটা বৈরী- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় মৃদু ও মাঝারি দাবদাহ সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এ বছর তা সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। এ ধরনের দাবদাহে এতটা গরম অনুভূত হয় না কখনো। কিন্তু এ বছর হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস আরো বলেন, দুর্বল মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ এবং বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় সারা দেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমবে। অথচ আগামী মাসের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সেই সঙ্গে আগামী জুনে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এপ্রিল মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল, চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে একটি-দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চার দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র চার-পাঁচ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে।
এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত মার্চ মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৫১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি এবং ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে । মার্চের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালি বায়ুপ্রবাহের সংযোগ ঘটায় মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে এবং চতুর্থ সপ্তাহে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় (২৪–২৬ মার্চ) ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাজশাহী ও সিলেটে (২৫ মার্চ) রেকর্ড করা হয়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন বজ্রসহ মাঝারি অথবা তীব্র কালবৈশাখী/বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র তিন থেকে চার দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী হতে পারে।
দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুই থেকে তিনটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
জুন মাসের প্রথমার্ধে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করতে পারে বলে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ১৯০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি। সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ১১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। এ বছরের ২১ দিনে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল ১১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চ মাসের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেটিও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি। ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৬০ সালে ৪২ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মন্তব্য চালু নেই