ফাঁস ঠেকাতে ‘ডিজিটালি’ হচ্ছে প্রশ্ন

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সমালোচনার মুখে তা রোধে এবার সম্পূর্ণ ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেবে সরকার।

এ পরীক্ষা ঠিকভাবে নিতে পারলে চলতি বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাও ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে শিক্ষক ও ব্যাংকে নিয়োগ এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল; দীর্ঘদিন ধরে সরকারি মুদ্রণালয় বিজিপ্রেসে এসব প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষার কয়েক দিন আগেই তা বিতরণ করা হত।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে তা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ডিজিটালি প্রশ্ন ছাপাতে বুয়েটের তৈরি একটি বিশেষ সার্ভার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বসানো হয়েছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সব জেলার কর্মকর্তাদের।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, সরকারি প্রাথমিকের প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আগামী মে মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নেওয়া হবে।

“আগে সারা দেশে একসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পরীক্ষা নেওয়া হলেও আসন্ন নিয়োগ পরীক্ষা কমপক্ষে চারদিনে নেওয়া হবে। বিভাগভিত্তিক বা ৫-৬ দিনেও এই পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।”

তিনি জানান, ডিজিটালি প্রশ্ন ছাপিয়ে সফলভাবে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া গেলে এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাও এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে নেওয়া হবে।

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ৯ সেট প্রশ্ন তৈরি করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, পরীক্ষার দিন সকালে এক সেট প্রশ্ন ডিজিটালি ছাপানো হবে।

এই প্রশ্ন দিয়েই বিকাল ৩টা থেকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের ৮০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে। আগে এই পরীক্ষা হত সকাল ১০টায়।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি পরীক্ষার আগের রাতে কম্পিউটারে লটারির মাধ্যমে আগেই সংগৃহীত ‘প্রশ্নব্যাংক’ থেকে প্রশ্ন তৈরি করবে বলেও জানান তারা।

মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপাতে বুয়েটের ইনস্টিটিউ অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি সার্ভার তৈরি করে দিয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বসানো হয়েছে।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে প্রতি জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে একটি করে কমিটি কাজ করে।

যেভাবে ছাপা হবে প্রশ্ন

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি পাসওয়ার্ডকে দুই ভাগে ভাগ করে পরীক্ষার দিন সকাল ৯টায় ডিসি ও শিক্ষা কর্মকর্তার মোবাইলে তা এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

পাসওয়ার্ডের এই দুই অংশ একসঙ্গে করে সার্ভার থেকে প্রশ্ন ডাউনলোডের অনুরোধ জানানো যাবে। এই অনুরোধ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় তা ‘অনুমোদন’ করবে। এরপর কেবল একবারের জন্য প্রশ্ন ডাউনলোড করা যাবে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, কোন কোন জেলায় প্রশ্ন ডাউনলোড করা হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই দেখা যাবে। কোনো জেলায় প্রশ্ন ডাউনলোড করা হলে সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘প্রশ্ন সফলভাবে ডাউনলোড হয়েছে’ বলে একটি বার্তা আসবে। সব জেলায় প্রশ্ন ডাউনলোড শেষ হলে সার্ভার বন্ধ করে (অফ লাইন) দেওয়া হবে।

“ঠিক কখন ও কতক্ষণ সময়ের মধ্যে প্রশ্ন ডাউনলোডের সুযোগ পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্টদের তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। শুধু প্রশ্ন ডাউনলোডের সময়ই সার্ভারটি অনলাইনে রাখা হবে, বাকী সময় এটি অফলাইনে থাকবে।”

৬৪ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের একজন করে কর্মকর্তাক এ বিষয়ে গত ৯-১০ এপ্রিল ঢাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সার্ভার থেকে প্রশ্নের যে ফাইল ডাউনলোড হবে সেটি ‘এনক্রিপটেড’ করা থাকবে। অর্থাৎ ওই ফাইলের লেখা বিশেষ সফটওয়ার ছাড়া পড়া যাবে না।

“এনক্রিপ্ট ফাইলটি পড়তে ‘ডংগল’ (ডিভাইস) সরবারহ করবে মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার আগের রাতে ওই ডংগল নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ডিসি অফিসে হাজির থাকবেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা ডিসি ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তা হস্তান্তর করবেন।”

ওই ডংগল ব্যবহার করে প্রশ্ন পড়া যাবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এক কপি প্রশ্ন প্রিন্ট নিয়ে দুপুর ২টার মধ্যে ফটোকপি করে তা প্যাকেট করতে হবে।

“পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে ডিসির প্রতিনিধিরা কেন্দ্রে প্রশ্ন সরবারহ করবেন। জেলা শহরেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে।”

ডিজিটালি প্রশ্ন ছাপাতে ৫ থেকে ৮টি ফটোকপি মেশিন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আগে থেকেই ডিসি অফিসে রাখা হবে।

প্রশ্ন ছাপানোর পুরো প্রক্রিয়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় করতে হবে। বিডিনিউজ২৪



মন্তব্য চালু নেই