আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে
রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তরুণ বৈমানিক তামান্না রহমান হৃদি (২২) নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকে পাথর হয়ে গেছে তার পুরো পরিবার।
হৃদির মা রোহানা ইয়াসমিন সরাসরি অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার কথাও বলেছেন।
তামান্নার মা আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘বিমান কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের চেয়ে আমার মেয়ে মেধাবী হওয়ায় তার সাফল্যে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই অকেজো ওই প্রশিক্ষণ বিমানে ওঠানো হয়।’
রোহানা ইয়াসমিন দাবি করে বলেন, ‘আমার মেয়ে মারা গেলেও ওই বিমানের প্রশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ কামাল তার জীবন নিয়ে বের হয়ে এসেছেন। তার মেয়ে উদ্ধার ও রক্ষার জন্য ডাকাডাকি ও সাহায্য চাইলেও তাকে সঠিক সময়ে উদ্ধার করা হয়নি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ওই বিমান থেকে তার পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে।
নিহত কো-পাইলটের মা বলেন, একইভাবে অকেজো ওইসব বিমানে প্রশিক্ষনার্থীদের তুলে দিয়ে কয়েক বছর পর পর মূল্যবান ও মেধাবীদের মারা হচ্ছে।
এর আগে বুধবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমান বন্দরের রানওয়েতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তামান্না রহমান হৃদি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। ওই সময় বিমানের প্রশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ কামালও গুরুতর দগ্ধ হয়। তামান্নার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে ঢাকায় পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমির প্রধান কার্যালয়ে রাতে তামান্নার কফিন হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে।
তামান্নার মরদেহ বাসায় পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রোহানা ইয়াসমিন, বাবা আনিসুর রহমান, একমাত্র বড় ভাই আর পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সন্ধায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কানাইয়া এলাকার নানার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে দুপুরে ঢাকার উত্তরার নিকুঞ্জ-২ এলাকায় ও বাদ আছর গাজীপুরের কানাইয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়।
পরে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন নিহত তামান্নার মা রোহানা ইয়াসমিন ও বাবা আনিসুর রহমান।
ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে ‘এ’ লেভেল শেষ করে দুই বছর আগে তামান্না ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমির পারসোনাল পাইলট লাইসেন্স কোর্সে (পিপিএল)। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১৬ ঘণ্টা ওড়ার পর গত মঙ্গলবার এককভাবে বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাইলট হয়ে ওঠার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
এদিকে, প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এর নেতৃত্বে আছেন সংস্থার পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম।
মন্তব্য চালু নেই