দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশন

বিএনপি-জামায়াত ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে

যদিও এবারের অধিবেশনে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণ এবং অধিবেশনে স্থান পাওয়ার কথা ছিল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিন্তু দীর্ঘ ৫৯ ঘণ্টা ৪৬ মিনিটের আলোচনায় ঘুরে ফিরে স্থান পেয়েছে বিএনপি ও জামায়াত প্রসঙ্গ।

সংসদের বাইরে থাকা এ দল দুটির কর্মকাণ্ডের সমালোচনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শেষ হয়েছে দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশন।

৩৯ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৩৬ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। তাদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব আলোচনায় বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। আর এ কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে অনেক সংসদ সদস্যই নিজের এলাকার ও এলাকার জনগণের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারেননি। এই কার্যসূচীর বাইরে পয়েন্ট অব অর্ডারসহ বিভিন্ন বিধিতে আলোচনার সুযোগ নিয়েও তারা প্রায় একই বক্তব্য দিয়েছেন।

সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপি জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধের মধ্যেই গত ১৯ জানুয়ারি এ অধিবেশন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে সংসদের কার্যপদেষ্টা কমিটিতে ৫ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। পরে স্পিকার সংসদ নেতার সঙ্গে আলোচনা করে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ান।

বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের পর সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির ঘোষণা পাঠ করে জাতীয় সংসদের দীর্ঘতম এ অধিবেশন সমাপ্ত করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশে এক নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ও পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। ৮৫ দিনে ১৩৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে গিয়েছি। সেখানে পোড়া মানুষের দুর্বিসহ কান্না দেখেছি। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্র সন্ত্রাস-সহিংসতা সমর্থন করে না। এটা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা প্রতিহত করতে হবে।’

সন্ত্রাস-নাশকতা রুখে দিয়ে জনগণ গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দশম সংসদের দ্বিতীয় বছরের প্রথম এ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০৭টি প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রধানমন্ত্রীর ১৯২টি উত্তর টেবিলে উত্থাপিত হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত চার হাজার ৭৯৬টি প্রশ্নের মধ্যে তিন হাজার ৬৭৫টি প্রশ্নের জবাব দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা।

চলতি অধিবেশনে মোট ১১টি বিল উত্থাপিত হয়। এরমধ্যে আটটি বিল পাস হয়েছে। তিনটি বিল সংসদীয় কমিটিতে বিবেচনাধীন আছে। এরমধ্যে একটি বেসরকারি বিলও রয়েছে। দশম সংসদে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৭১ (ক) বিধিতে আনীত ১৩০টি নোটিশ আলোচিত হয়। ৬৮ বিধিতে হরতাল অবরোধকালে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সংসদে আলোচনার জন্য ৭১ বিধিতে ৫২৯ জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ জমা পড়ে। এরমধ্যে ৩০টি নোটিশ গৃহীত হয়। নয়টি নোটিশ আলোচিত হয়।

বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারে থাকায় আগের মতো চলতি অধিবেশনেও তাদের সরকারি দলের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা সবাই খালেদা জিয়া ও বিএনপির ব্যাপক সমালোচনা করেন। কার্যসূচির বাইরে পয়েন্ট অব অর্ডারসহ বিভিন্ন বিধিতে আলোচনার সুযোগ নিয়েও তারা একই সুরে বক্তব্য দিয়েছেন।

এদিকে আগামী ১ জুন বসবে চলতি বছরের বাজেট (ষষ্ঠ) অধিবেশন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ৪ জুন সংসদে বাজেট পেশ করবেন বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, আগামী বাজেট অধিবেশনও দীর্ঘ হবে। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই