অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে নীতিমালা

বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে টাকা পাঠানোর চেয়ে অনৈতিক অর্থপাচার আরো বেশি সহজ। কারণ অর্থপাচারকারীদের কোনো আইন কানুনের তোয়াক্কা করতে হয় না। যখন ধনী দেশগুলো থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার হার হ্রাস পেয়ে সর্বনিম্ন রেকর্ড করছে তখন আমাদের দেশ থেকে অর্থপাচারের হার লাফিয়ে লাফিয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ২০১৩ সালের শেষে বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর হার বেড়েছে আগের বছরের শতকরা ৬২ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার (১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) বাংলাদেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যায়।

আর এ কারণেই অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে মধ্যমেয়াদী (২০১৫-১৭) একটি নীতিমালা প্রদান করেছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এনসিসি)। এ নীতিমালায় মোট ১১টি পদক্ষেপের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেগুলো প্রয়োগের মধ্য দিয়ে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অর্থ-মন্ত্রণালয়ে এনসিসির ১০তম বৈঠকে বৈঠকে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, এনসিসি’র চেয়ারম্যান এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মধ্যমেয়াদী এই নীতিমালাগুলো পরিপালনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দক্ষতা বাড়বে। তাছাড়া এগুলো জাতিসংঘের নিয়মকানুন ও প্রটোকলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ফলে এ নীতিমালার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করতে আরো অনেক সহজ হবে।

এই নীতিমালাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
– মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর তত্ত্বাবধানে নানা ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতির পারিচয় এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত মূল্যায়নগুলো প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

– অর্থ পাচারের মাধ্যমে দুর্নীতি করা থেকে বিরত রাখতে দুর্নীতিকে একটি উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে আলোচনায় আনতে হবে।

– স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, অন্যান্য বহুজাতিক সংগঠিত অপরাধ ও তাতে অর্থায়ন রোধে বর্ডারের নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে।

– অবৈধ অর্থায়নের প্রবাহ রোধে কালো টাকার সৃষ্টি, অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত কর ফাঁকি, বাণিজ্যকে ভিত্তি করে টাকা পাচার অ্যাড্রেস করতে হবে।

– বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ ফিরিয়ে এনে এবং ফাঁকি দেয়া টেক্স আদায় করার মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ফান্ড ট্রান্সফারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

– নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে করে টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো ঝুঁকি চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করা যায়।

– অর্থপাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে বিশেষ করে এনজিও এবং ডিএনএফবিপিগুলোকে সম্মত হতে হবে।

– তদন্তের মান ও ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধীদের অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিচারে অপরাধীদের ভয় পাওয়া যাবে না।

– লক্ষ্য নির্ধারিত আর্থিক বিষয় যেমন- সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও এর বিস্তার রোধে কার্যকর সনাক্তকরণ পদ্ধতি বের করতে হবে।

– জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পলিসি এবং কার্যকর পদ্ধতিগুলোর সমন্বয় করতে হবে।

– একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই