বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী ধনুক

হাতিয়ার আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবসভ্যতা এগিয়ে যায় অনেকদূর। মানুষ যত এগিয়েছে হাতিয়ারও তত উন্নত হয়েছে। পাথরের অস্ত্র থেকে পাল্টাতে পাল্টাতে এখন অতি আণবিক বোমাও আমাদের হাতে চলে এসেছে। মাইলকে মাইল দূর থেকেও একটি মানুষ হত্যা থেকে সভ্যতা ধ্বংস করে দেয়া যায় এই অস্ত্রের মাধ্যমে। তবে হাতিয়ারের এই আধুনিকায়ন হতে কিন্তু অজস্র বছর পাড়ি দিতে হয়েছে। লোহার তলোয়ারের দাপট চলতে চলতে যে অস্ত্রটি গোটা বিশ্বকে একসময় তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেটার নাম ধনুক। ইতিহাস বিখ্যাত পারস্যযুদ্ধে গ্রীসের সঙ্গে পার্সিরা হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এই ধনুক।

কিন্তু এখনতো আর ধনুকের সময় নেই। এই বন্দুক মিসাইলের জামানায় যদি কেউ দাবি করেন যে, চীনের কুইন রাজবংশের আমলে তৈরি করা ‘ক্রসবো’/ধনুক বর্তমানের অনেক অ্যাসল্ট রাইফেলের থেকেও দ্বিগুন শক্তিশালী ছিল এবং অধিক গতিতে তীর ছুড়তে পারতো, তাহলে হয়তো বা এই দাবিকে আমরা পাগলের প্রলাপই বলবো। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি চীনের কুইন সাম্রাজ্য সময়ের প্রাপ্ত টেরাকোটার মুর্তিতে যে ধনুক পাওয়া গেছে তা বর্তমানের অনেক বন্দুকের তুলনায় শক্তিশালী এবং এই ধনুকের কারণেই কুইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে কেউ মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি।

টেরাকোটা যোদ্ধাদের হাতে যে ধনুক পাওয়া যায় সেগুলোর বয়স প্রায় দুই হাজার দুইশ বছর পুরনো। ধনুক থেকে ছোড়া তীর কমপক্ষে ২৬০০ ফুট দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুতভাবে আঘাত হানতে পারে। যা বর্তমানের হিসেবে প্রায় নয়টি ফুটবল মাঠের সমান। ধারণা করা হয়, চীনের প্রথম সম্রাট কুইন শি হুয়াংয়ের আমলে এই অস্ত্রটিকে বিশেষ তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই আমলের অন্যতম অস্ত্র ছিল এটা।
BOWসম্প্রতি নৃতাত্ত্বিকরা ধনুকের পাশাপাশি অনেক কথিত সেই ‘কুইং’ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের বক্তব্যে এই কুইংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও মুর্ত কোনো প্রমাণ ছিল না। এই কুইং দিয়েই তৈরি হতো ওই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ধনুক। এছাড়াও যুদ্ধের সময় ছাড়া এই অস্ত্রটিকে খুলে রাখার কাজেও এই যন্ত্র ব্যবহার করা হতো।

নৃতাত্ত্বিক দলের প্রধান শেন মাওসেং সেন্ট্রাল চায়না টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস যে শুধু কুইন সাম্রাজেরই নয় পুরো চীনেই অস্ত্র সংক্রান্ত কিছু নীতিমালা এবং এগুলো ব্যবহারের ব্যাপারেও কিছু নিয়ম ছিল। অস্ত্র উৎপাদন, সংরক্ষন এবং বহনের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হতো।’



মন্তব্য চালু নেই