রাউজানে যৌতুকের নির্যাতনে বলি হলো গৃহবধু
চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার দাশ পাড়ায় স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে রুপালী দাশ (২৭) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাতের এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে হত্যাকারীরা ভোর সকালে নিহত বধুর লাশ পিছনের পুকুরে ফেলে দেয়। শুক্রবার সকালে মৃগি রোগ আক্রান্ত হয়ে পানিতে ডুবে রূপালীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচারণা চালায়। এই হত্যার ঘটনাটি ঘটে পৌর আট নম্বার ওয়ার্ডের ফণি দাশের বাড়িতে। হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধু ওই এলাকার সুমন দাশের স্ত্রী।
এলাকার জনসাধারণ ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অসচ্ছল এই পরিবারের সবসময় আশান্তি বিরাজমান ছিল। যৌথ এই পরিবারে হত্যাকারীরা এর আগেও বেশ কয়েকবার রূপালীকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো বলে সূত্র জানায়। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় শালিস নালিসী বৈঠকও হয় থানা ও সমাজিক ভাবে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম পারুয়া গ্রামের চিত্ত রঞ্জন চৌধুরীর কন্যার রূপালীর সাথে সুমন দাশের বিয়ে হয়েছিল প্রায় চার বছর আগে। রূপালীর মা মিরা চৌধুরীর বলেছেন তার মেয়েকে বিয়ে দিতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল। মেয়ের সুখের কথা ভেবে সব সময় স্বামী পরিবারে শান্তির জন্য সাহার্য্য সহায়তা দেয়া হতো। সর্বশেষ প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেও রূপালী ফোনে তাকে যৌতুকের জন্য মারধর করার কথা জানায়।
সর্বশেষ স্বামী পরিবার একটি আলমিরা অথবা ২০ হাজার টাকা এনে দেয়ার জন্য রূপালীকে শাররীক নির্যাতন করছিল। মিরা চৌধুরীর দাবি তার মেয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে শাররীক নির্যাতন শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০ মার্চ নির্যাতনের ঘটনায় রূপালী মারা যায়। পাড়ার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন লাশের গায়ের বিভিন্নস্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার আগে হত্যাকারীরা বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে আসা রাউজান পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর জানানতুল ফেরদৌস ডলি জানান, লাশ দেখে মনে হয়েছে এটি হত্যাকান্ড। তিনি এসময় পুলিশকে ফোন করে ঘটনা বিবরল দেন। পারুয়া থেকে আসা মহিলা মেম্বার জানাতুল ফেরদৌস দাবি করেন এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তিনি সুষ্ট তদন্ত করে খুনিদের আইনের কাঠগড়া দাঁড় করার আহবান জানান। নিহত গৃহবধুর কাকা সুরঞ্জন চৌধুরী চোখ মুচতে মুচতে বলেছেন ওরা খুনি ওদের বিচার চাই।
কথা বললে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনা স্বীকার করে বলেছেন নিহত গৃহবধুর মা মিরা চৌধুরীর দায়ে করা অভিযোগ এজাহার হিসাবে গ্রহন করা হয়েছে। এই হত্যার জন্য বাদি মিরা চৌধুরী রূপালীর স্বামী সুমন দাশ, শাশুড়ী আঞ্জনা দাশ, দেবর ছোটন দাশ, ননদ লাকি দাশ, টকি দাশ, ভাসুর রাম কৃষ্ণ দাশ, জাঁ বাসনা দাশসহ সুনিদিষ্ট নয় জনকে আসামী করেছেন। লাশ ময়না তদন্তের জন্য গতকাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই