সবুজ সংকেত পাচ্ছেন কে?
জমে উঠেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের তারকা হোটেলগুলো এখন সরগরম প্রার্থী আর ভোটারদের আনাগোনায়। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই ওইসব হোটেলে বিভিন্ন পার্টির নামে চালানো হচ্ছে প্রচারণা।
সংগঠনটির সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে যারা লড়তে চান তাদের খাওয়া-ঘুম নেই বললেই চলে। অনেকেরই এখন দম ফেলার সময় নেই দেশের ‘মিনি পার্লামেন্ট’ খ্যাত এফবিসিসিআই নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়া নিয়ে।
এদিকে পূর্বাভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার-সমর্থন ছাড়া কেউই সংগঠনটির সভাপতির আসন গ্রহণ করতে পারেননি। অনেক সময় সরকার-সমর্থক একাধিক প্রার্থী হলে শীর্ষ পর্যায় থেকে অন্যদের থামিয়ে একজনকে সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদের জন্য মাঠে রয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। তার প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে কাজ করছেন এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রথম সহসভাপতি ও চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী।
এদিকে মাঠ পর্যায়ের ভোটারদের কাছে টানতে বেশি তৎপর আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি চট্টগ্রাম থেকে তার নির্বাচনী প্রচারকাজ শুরুও করেছেন। নিজ কোম্পানির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
অন্যদিকে মনোয়ারা হাকিম আলী এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেও সরাসরি কোনো কার্যক্রম দেখাচ্ছেন না। তবে পরোক্ষভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক মাঠ গরমে যে দুজন ব্যবসায়ী নেতা কাজ করছেন, তারা কেউই এখনো পর্যন্ত ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাননি। তবে এটা ঠিক, তাদের মধ্যে কেউ একজন পাবেন। এখন কে পাবেন সেটাই ভোটারদের ভাবনা।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল ওহেদ বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে দুই পক্ষই বেশ তৎপর বলে মনে হচ্ছে। তবে সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত কোনো প্রার্থীই প্রকাশ্যে প্রচারণায় আসছেন না। আমি আশা করি, উচ্চ পর্যায় থেকে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই এফবিসিসিআই নির্বাচন করার জন্য সহায়তা করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উভয় প্রার্থীই সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তারা প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, ‘সভাপতি হওয়ার জন্যই নির্বাচন করব। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করব। প্রধানমন্ত্রী এ দেশের নারী জাগরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। তিনি এ দেশের নারীর উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করছি, তিনি আমাকে উৎসাহিত করবেন।’
এদিকে নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে নারাজ আবদুল মাতলুব আহমাদ। মনোনয়নপত্র দাখিলের পরই তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান। তবে গত মাসের শেষ দিকে বিশিষ্ট এই শিল্পপতি বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে এফবিসিসিআই নির্বাচনের নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা এবং প্রচারকাজ শুরু করেন।
ওই অনুষ্ঠানে শতাধিক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রচার কার্যক্রমের সূচনা করেন তিনি। এ সময় মাতলুব আহমাদ দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনাসহ ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
প্রসঙ্গত, এফবিসিসিআইয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন (২০১৫-১৭) আগামী ২৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী বকেয়া চাঁদা আদায়ের তারিখ ২৪ মার্চ ধার্য করা হয়েছে। সংস্থা থেকে প্রতিনিধি/ভোটার মনোনয়নের সর্বশেষ তারিখ ২৫ মার্চ। প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ মার্চ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৯ এপ্রিল।
পরিচালক পদে প্রার্থিতা দাখিলের তারিখ ১৯ এপ্রিল। পরিচালক পদে নির্বাচন ২৩ মে। সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি এবং সহসভাপতি পদে নির্বাচন ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৫-১৭ মেয়াদের জন্য এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে। আর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে। এ ছাড়া চেম্বার গ্রুপ থেকে সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন। চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন এবং অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৫ জন করে মোট ৩০ জন পরিচালক নিয়ে গঠিত হবে পরিচালনা পর্ষদ।
সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে প্রাক্তন দুই পরিচালক শামছুল আলম ও মনজুরুল হককে। আর আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম আমীন উদ্দিন। এই বোর্ডে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে প্রাক্তন দুই পরিচালক এ এস এম কামাল উদ্দিন ও আলহাজ মো. আইয়ুব। এ ছাড়া নির্বাচন বোর্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন এফবিসিসিআইয়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ আরেফিন।
মন্তব্য চালু নেই