ওয়েজবোর্ড চান না অনলাইন গণমাধ্যম মালিকরা

অনলাইন গণমাধ্যমের বেলায় ওয়েজবোর্ড রাখার বিরোধিতা করছেন মালিকরা। অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত উপ-কমিটির উপস্থাপিত খসড়া নীতিমালা নিয়ে দ্বিতীয় বৈঠকের আলোচনায় মঙ্গলবার মালিকরা এ বিরোধিতা করেন। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৪’ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির বৈঠক মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান তছির আহাম্মদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উপস্থাপিত খসড়া নীতিমালা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মোট সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত খসড়া নীতিমালার চারটি অধ্যায়ের পর্যালোচনা হয়েছে। বাকি তিনটি অধ্যায় পরবর্তী বৈঠকে পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত হবে ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৪’ এর খসড়া।

বৈঠকে উপস্থিত অনলাইন নীতিমালা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খসড়া নীতিমালায় বেতন কাঠামো রাখার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক অনলাইন প্রতিষ্ঠানের মালিক আপাতত অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য ওয়েজবোর্ডের বিধান রাখার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তবে কমিটির সরকারি প্রতিনিধি ও আইটি বিশেষজ্ঞসহ অন্যান্য সদস্য ওয়েজবোর্ড রাখার পক্ষে মত দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খসড়া উপ-কমিটির প্রধান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার  বলেন, ‘কোনো বিষয়ই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়াটি পর্যালোচনা হচ্ছে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলা যাবে না।’

ওয়েজবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খসড়াতে আমরা বেতন কাঠামো রাখার কথা বলেছি। এ বিষয়ে সম্প্রচার কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন  বলেন, ‘খসড়া নিয়ে মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আরেকটি মিটিংয়েই হয়তো খসড়া চূড়ান্ত করতে পারব। এর পর মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে।’

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ, আইএনবি নিউজের প্রধান ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ, কমিটির সদস্য সচিব ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

আলোচিত ওয়েজবোর্ড রাখা না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ  বলেন, ‘বিষয়টির ঠিক বিরোধিতা করিনি। সবকিছু তো নীতিমালায় থাকার দরকার নেই। পরে সম্প্রচার কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অথবা নীতিমালা পরিবর্তনও করা যাবে।’

প্রথমে থাকলে সমস্যা কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, চূড়ান্ত হয়নি।’

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে প্রণীত ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’র সঙ্গে মিল রেখেই অনলাইন নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে।

উপ-কমিটির খসড়া অনুযায়ী প্রতিটি অনলাইন গণমাধ্যমকে সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব থাকবে সম্প্রচার কমিশনের হাতে।

নীতিমালা পরিপন্থী কাজ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারবে সম্প্রচার কমিশন। নীতিমালা লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারবে কমিশন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকারই কেবল শাস্তি প্রদান করতে পারবে।

খসড়া অনলাইন নীতিমালা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খসড়া নীতিমালায় বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ রয়েছে। খসড়া অনুযায়ী কোনো ধর্মের প্রতি অবজ্ঞামূলক, বন্ধু রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিপন্থী কোনো সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না। এ ছাড়া বিচারকাজে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা, সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর প্রতি কটাক্ষসহ আরও কিছু বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে বিধিনিষেধ থাকছে।

এ সময়ে বিশ্বজুড়ে অনলাইন গণমাধ্যম ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনলাইনের তাৎপর্য অনুধাবন করে বিশ্বের অনেক দেশ অন্যান্য প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে অনলাইনকেও আমলে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা চূড়ান্তের কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশে অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনসহ সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপরীতে নীতিমালাহীনতার সুযোগকে নেতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর অভিযোগও আছে অনেক অনলাইন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে।



মন্তব্য চালু নেই