বাংলাদেশ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পর্যবেক্ষণ

গত বছর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে রাজনৈতিক সঙ্কট প্রায় সমাধান অযোগ্য সমস্যায় পরিণত হতে চলেছে। মূল ধারার দুটি রাজনৈতিক দল দ্রুত সঙ্কট নিরসনে পদক্ষেপ না নিলে অচল হয়ে যেতে পারে দেশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দু’দলই। এমনকি সেনা অভ্যুত্থানও উৎসাহিত হতে পারে।

সংঘাত প্রতিরোধ বিষয়ক অলাভজনক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, দীর্ঘায়িত সঙ্কট ও হিংসাত্মক এই রাজনীতির কারণে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখিন হবেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়েই। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি দেশে সেনা অভ্যুখানকে উৎসাহিত করবে।

প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদিও এখনও এর (সেনা অভ্যুত্থান) কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না তবে ইতিহাস অনুযায়ী এ সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না।

বিবৃতিতে বলা হয়, আইনের শাসন এবং বিরোধী ও বিজয়ী উভয়ের অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে অনিচ্ছুক মূলধারার বৃহত্তম এই দল দু’টি। এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা কাজে লাগাতে পারে চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী চক্র।

চলমান সহিংসতার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দায়ী করে ওই পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংসদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি না থাকায় তারা রাজনৈতিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে বলে জোর দিয়ে বলছেন আওয়ামী লীগ ও এর নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। বিএনপি যাতে আর সংসদে ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সরকার বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। এসব দমন-পীড়নের মধ্যে দুর্নীতি ও ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক নিহত হলেও বিএনপি এর দায় স্বীকার করেনি (কয়েকশ হিন্দু বাড়ি ও তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করতে দেখা গেছে)। দলটি এবার তার মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে জোর করে সরকার উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি তার কর্মী সমর্থকদের রাজপথে সফলভাবেই ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।

যদিও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রধান দাবি সেটির পক্ষে খুব কমই জনসমর্থন সৃষ্টি করতে পেরেছে বিএনপি।

সঙ্কট নিরসনে উভয় দলকে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে দুটি দলই সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ভিন্নমতাবলম্বীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ কাজটি করতে পারে।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসহ গণতান্ত্রিক নিয়মকানুন পুনরুদ্ধারে আওয়ামী লীগের উচিৎ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিন আটকে থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা উচিৎ।

বিএনপি তার রাজনৈতিক ভাগ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে রাজপথের সহিংস রাজনীতি পরিহার করে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা করে।

পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পড়ুন:  Mapping Bangladesh’s Political Crisis



মন্তব্য চালু নেই