পেট্রোল বোমা বিল আসছে সংসদে
পেট্রোল বোমা বিল উত্থাপিত হচ্ছে জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে চলমান অবরোধ ও হরতালে তিন শতাধিক গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং অর্ধশতাধিক মানুষ পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারার পরিপ্রেক্ষিতে এমন একটি বিল উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম।
এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে কাল মঙ্গলবার ফের বসছে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে অধিবেশন। এরই মধ্যে বিলটি উত্থাপন এবং পাস হতে পারে বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র।
বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৩০২ ধারায় মানুষ হত্যা বা খুনের অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। পেট্রোল বোমায় মানুষ মারা খুনের মধ্যেই পড়ে। যেহেতেু ধারাবাহিকভাবে একটি সন্ত্রাসী চক্র এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, সে জন্য এটাকে খুনের মতো ফৌজদারি কার্যবিধির আইনের মধ্যে ফেলে মৃত্যুদণ্ডে মতো দণ্ড দেওয়া উচিত। নয়তো আলাদাভাবে পেট্রোল বোমা আইন নামে নতুন একটি আইন তৈরি করা জরুরি। জনগণের জীবনের নিরাপত্তায় অপরাধ দমনে এই নতুন বিলটি সংসদে আনা যেতে পারে।’
এদিকে আইন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেছেন, ‘পেট্রোল বোমা বিল নতুন করে না এনেও অ্যাসিড-সন্ত্রাস বিলের সঙ্গে সংশোধনী এনে জননিরাপত্তায় কাজে লাগানো যায়।’
তিনি বলেছেন, ‘অ্যাসিড-সন্ত্রাস অবলিক পেট্রোল বোমা অপরাধ দমন আইন নামের এই আইনটি সংশোধিত রূপে প্রবর্তন করা সম্ভব। সাজার মেয়াদও যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা যায়। এ ছাড়া অর্থদণ্ডসহ মৃত্যুদণ্ডও প্রদান করার বিধান সংযোজিত করে আইনটিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। আর তা না হলে আলাদাভাবেই পেট্রোল বোমা আইন পাস হওয়া জরুরি।’
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতায় যেহেতু দেদার বা অজস্রভাবে পেট্রোল বোমার ব্যবহার হচ্ছে, সেহেতু নতুন একটি আইন পাস করা সত্যিই জরুরি হয়ে পড়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ রকম একটি বিল আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যেভাবে বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, তা খুন ছাড়া আর কিছু নয়। দেশের মানুষ চাইলে আইন করে এ রকম রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে সরকার।’
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ২০১৩ সাল থেকেই দেশে পেট্রোল বোমা এবং ককটেল মেরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এর অনেকগুলোরই যথাযথ বিচার পায়নি ভিকটিমের পরিবার। যারা পেট্রোল বোমা মেরে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, তাদের খুব কমসংখ্যক দুষ্কৃতকারীকে আটক করতে পেরেছে পুলিশ। আবার যাদের ধরেছে তাদের বিরুদ্ধে খুনের অপরাধ প্রমাণ করাটাও সাক্ষীর অভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্যই নতুন একটি বিল আনা জরুরি বলে মনে করেন হাজি সেলিম। তার মতে, আইনটির বিচার প্রক্রিয়া সহজ করে দ্রুত শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করলে রাজনৈতিক সন্ত্রাস কমে আসবে। নিরাপত্তা পাবে দেশের সাধারণ মানুষ।
মন্তব্য চালু নেই