হাইস্পিড ট্রেন

‘ফিরিয়ে দেয়া হল রেলওয়ের প্রস্তাব’

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ২৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টার কিছু বেশি। ঘণ্টায় ট্রেন চলবে ২০০ কিলোমিটার গতিতে। এজন্য নির্মাণ করা হবে স্ট্যান্ডার্ড গেজ ডাবল লাইন রেলপথ, চলবে হাইস্পিড (দ্রুতগতি) ট্রেন। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগেও আগ্রহী চীন। তবে এখনই হাইস্পিড ট্রেন চালুর বিষয়ে সম্মত নয় পরিকল্পনা কমিশন। এজন্য রেলওয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে গত বছরের নভেম্বরে প্রাথমিক প্রস্তাব দেয় সিআরইইজিসি। এতে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে ব্যয় হবে ৩০৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার (প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা)। এর মধ্যে চীন বিনিয়োগ করবে ২৪৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। বাকি টাকা সরকারের তহবিল থেকে দিতে হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) পাঠায় রেলওয়ে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগেও (ইআরডি) চিঠি দেয়া হয়। চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় চড়া সুদের ঋণ নেয়ার বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনাও হয়।

রেলওয়েকে পাঠানো এক চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বিগত বছরগুলোয় সবক্ষেত্রে রেলওয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যবহার করতে না পারা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। উপরন্তু ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এ অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনের মতো একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা সমীচীন হবে না।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর্থিক হিসাবে এর পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমাদের পক্ষ থেকে হাইস্পিড ট্রেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদনে কোনো আপত্তি নেই। তবে বর্তমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হোক। একই সঙ্গে অর্থ পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন করা হবে।’

তবে পরিকল্পনা কমিশনের যুক্তি সঠিক নয় বলে দাবি করছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা জানান, গত দুই বছরে রেলওয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৫ শতাংশের বেশি। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে তা নিয়মিত খরচ করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের ছয়টি প্রকল্প এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তাই পিডিপিপি অনুমোদন না করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের দেখানো যুক্তি সঠিক নয়। এছাড়া গত অক্টোবরে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালুর পরামর্শ দেন।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, রেলওয়ে চীনা অর্থায়নের যে যুক্তি দেখাচ্ছে, সেটি অনেকটাই নেতিবাচক। উচ্চসুদে বায়ার্স ক্রেডিট নেয়ার প্রতি রেলওয়ের আগেও ঝোঁক দেখা গেছে। এতে রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা ভারী হবে। এছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দোহাই দিয়ে অনেক অহেতুক প্রকল্প নিয়েছে সংস্থাটি, যা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

গত ডিসেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে রুটটিতে স্ট্যান্ডার্ড গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, রেলপথ নির্মাণের পাশাপাশি হাইস্পিড ট্রেন কিনতেও ৭৭ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল সিআরইইজিসি। ২০ বছর পরিচালনার পর হাইস্পিড ট্রেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তি করায় আপাতত ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন প্রকল্পটি স্থগিত রাখা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলপথ নির্মাণের পিডিপিপিতে বলা হয়, হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে বিশেষ ধরনের রেলপথ দরকার। এক্ষেত্রে বিদ্যমান রুটের পরিবর্তে সরাসরি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, মোহনপুর, ময়নামতি, লাকসাম, ফেনী, চিনকি আস্তানা, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ কমানো ও অধিক গতির জন্য উড়ালপথে নির্মাণ হবে সাশ্রয়ী।

দুই ধাপে তিন বছরে এ রেলপথ নির্মাণ করা যাবে। প্রথম ধাপে ঢাকা-লাকসাম রুটে প্রায় ১১১ কিলোমিটার নির্মাণ করা হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে লাকসাম-চট্টগ্রাম রুটে ১২১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই