কার্যালয় ছাড়বেন না খালেদা জিয়া
সকল প্রতিকূল পরিবেশই তৈরি করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কার্যালয় ছেড়ে যাবেন না । কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর তিনি এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের আচরণে খুবই ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, ‘যত কিছুই হোক, কার্যালয় ছাড়বো না। এটা অসম্ভব। আমার হারানোর কিছুই নেই। আমি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি ও আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ ও দলের অগণিত কর্মী-সমর্থক আমার সঙ্গে আছেন। অন্ধকার, ক্ষুধা, তৃষ্ণা সহ্য করেও মনোবল অটুট রাখতে তিনি সবাইকে সাহস দিয়েছেন। বলেছেন, আমি বহু কিছু সহ্য করেছি, আমি সহ্য করতে পারবো। দেশের মানুষ সবই দেখছে।’
বিএনপি সিনিয়র নেতারা বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করেননি। আন্দোলনে কোন হেরফের ঘটেনি। নিজের কার্যালয় ছেড়েও যাননি। প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি কারাভোগ করেছেন কিন্তু ভয় পাননি। তখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও বিএনপির আন্দোলন থেমে থাকেনি। এবারও খালেদা জিয়াকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ২০ দলের আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান আন্দোলনে নিজের বাসার সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এখন তিনি কার্যালয় ছেড়ে গেলে ২০ দলের আন্দোলনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নেতাকর্মীরা হতাশ ও সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে। ফলে তার কার্যালয় ছেড়ে যাবার সম্ভাবনা কম। বিএনপির নেতারা জানান, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনে বিচলিত নন খালেদা জিয়া।
নেতাদের তিনি বারবার বলেছেন, সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার হলে তুলনামূলক তরুণ নেতারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা গ্রেপ্তার হলে কর্মীরা রয়েছে। এমনকি তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও যেন নেতাকর্মীরা হতাশ বা হতোদ্যম না হয়। খালেদা জিয়ার এমন নির্দেশনা ও মনোভাবের পর নেতাদের গ্রেপ্তারে হতোদ্যম নয় কর্মীরাও। নেতারাও অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সক্রিয়। কৌশলী ভূমিকায় তারা নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন। বিএনপি নেতারা জানান, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রেখেছিল। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও কর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রাখেন। এবারও কর্মীদের ওপরই ভরসা রাখছেন খালেদা জিয়া। নেতারা জানান, রাজনৈতিক কৌশল-পাল্টা কৌশলের সীমা পেরিয়ে একের পর এক নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে সরকার।
কখনও চাপ প্রয়োগ করে, কখনও ভয় দেখিয়ে আবার কখনও ভীতিকর প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় রাজনীতি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলনে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ফলে সরকার চাপ প্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে তাকে টলাতে পারবে না। এটা তার রাজনৈতিক ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়। তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আপসহীন ভূমিকা রেখেছিলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় পরিবারের সদস্যদের ওপর চূড়ান্ত নির্যাতনের মুখে তিনি অনড় অবস্থানের পরিবর্তন করেননি। প্রতিবার তার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র ফিরেছে। এবারও ব্যর্থ হওয়ার কোন কারণ নেই।
মন্তব্য চালু নেই