এবার অসহায়দের টয়লেট বানিয়ে দিলো আরেক অসহায় গার্মেন্টকর্মী
শীতার্তদের শীতবস্ত্র দেয়ার পর এবার দূ:স্থদের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট তৈরি করে দিলেন সেই গার্মেন্ট কর্মী। শুধু টয়লেটই নয়, টয়েলট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সামগ্রীও অর্ধশতাধিক অসহায় মানুষের মাঝে প্রদাণ করলো ওই যুবকটি। তবে সেগুলো সবই বিনামূল্যে। নিজের উদ্যোগে, অতিসামান্য রোজগারের টাকা জমিয়ে কয়েক মাস পরপরই জনসচেতনতা ও সামাজিক উন্নয়নে সে ছুটে আসে সাধারণ মানুষের মাঝে। নিজে পেশায় সামান্য গার্মেন্ট শ্রমিক, বেতনও যতসামান্য তবুও মনোবলের দিক থেকে মোটেই সে সামান্য নয়। আর্থিকভাবে গরীব হলেও মনের দিক থেকে ধনী ওই যুবকের নাম আলাউদ্দীন (২৬)।
সে সাতক্ষীরা সদর সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের হাওয়ালখালী গ্রামের মৃত সুজাউদ্দীনের পুত্র। আলাউদ্দীন ঢাকার একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করে। তার সামান্য উপার্জনে নিজের মা-বোনের সংসার চালিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেন সমাজসেবামূলক নানা কর্মকান্ডে। প্রতিমাসের রোজগারের কিছু টাকা জমিয়ে ৩/৪মাস পরপরই ঝাপিয়ে পড়েন আর্তমানবতার সেবায়। অর্থনৈতিক ভাবে দারিদ্র হলেও মনের ধনী আলাউদ্দীন নিজের টাকায় সম্প্রতি আইচপাড়ার কয়েকজন দূ:স্থ অসহায় পরিবারের মাঝে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন করে দিয়েছেন নিজ হাতে। কয়েক পরিবারকে দিয়েছেন টয়লেট তৈরির রিংস্লাব। সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য অর্ধশতাধিক মহিলাদের মাঝে বিতরণ করেছেন হারপিক, টয়লেট ব্রাশ, সাবান, সাফএক্সেল ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, ‘পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন, সুস্থ থাকুন- ভালো থাকুন’ স্লোগানে অতিসম্প্রতি আইচপাড়া প্রাইমারি স্কুল চত্বরে আয়োজন করেন পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনা অনুষ্ঠান। ছোটবয়সে পিতার মৃত্যু আর পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে নিজে হাইস্কুলের গন্ডি না পেরুলেও বাস্তবতার জ্ঞানী আলাউদ্দীন গত ৮/৯বছর ধরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজ এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের কল্যাণে। গেলো ডিসেম্বরে হাওয়লখালী এলাকায় অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন শীতবস্ত্র। তারও কিছুদিন আগে চিকিৎসক নিয়ে ও ফ্রি ঔষধ দিয়ে ‘মানবতার হাসপাতাল’ নামে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। আলাউদ্দীন জানান, প্রতি ২/৩ মাস পরপর ঢাকা হতে গ্রামের বাড়ীতে ফিরে শুরু করেন তার মহৎ কর্ম। তার মহৎ কর্মগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ঈদ পার্বনে গরীব অসহায় দরিদ্রের মাঝে সেমাই, চিনি, টুপি বিতরণ, গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদহে মাঠে মাঠে গিয়ে তৃষ্ণার্ত কৃষককে সেলাইনের পানি পান করানো, গরীব কৃষকদের হালকা কৃষি উপকরণ প্রদাণ, গরীব ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বই-খাতা-কলম সহ শিক্ষা উপকরণ প্রদাণ, শিশুদের ও পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে সচেতনতা সৃষ্টি, এলাকার ভাঙ্গা-চুরা রাস্তা গুলো নিজেই মাটি ভরাট করে সংষ্কার করা ছোট খাটো আরো নানান কর্মসূচী। তবে এ সকল কর্মসূচী সে নিজের জমানো অর্থ দিয়েই সম্পন্ন করে থাকেন। ‘মানব সেবাই বড় ধর্ম’ এ মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে তিনি এ ধরনের কর্ম করে থাকেন বলে জানান আলাউদ্দীন। তিনি জানান, আমি নিজে দারিদ্র তাই অন্য দারিদ্রদের কষ্ট লাঘবে তাদের পাশে দাড়াতে চাই। ৮ম শ্রেনি উত্তীর্ণ আলাউদ্দীন আরো বলেন, ৩০বছর পরে হলেও আবার লেখা পড়া করতে চাই। নিজের মনের সুপ্ত আকাঙ্খা ও প্রতিভা গুলো বিকশিত করতে চাই। তিনি জানান, ‘অর্থ সম্পদ, কলমের কালি ও মুখের ভাষন দিয়ে ইতিহাস গড়েছে অনেকে কিন্তু জীবনের বিবেক দিয়ে ইতিহাস গড়েছে কতজনে? কোথাও ভালো কাজ না করে মানুষ বলে দাবি করাও উচিৎ নয়।’
মন্তব্য চালু নেই