হলোলেন্স: ঘরে বসে মঙ্গল অভিযান!

পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির উত্থানটা বুঝি বছরেই হয়েছিল। ২০১৪ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাজারে পরিধানযোগ্য গ্যাজেট নিয়ে আসে। এই দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চায় না সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটও। এবার তারা ‘হলোলেন্স’ নামে একটি পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি আনার ঘোষণা দিয়েছে। বাজারে আসার আগেই প্রযুক্তিপ্রেমিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ‘হলোলেন্স’।

হলোলেন্স কী?
হলোলেন্স সম্পর্কে জানার আগে হলোগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা দেয়া যাক। হলোগ্রাফি হচ্ছে এমন এক ধরনের ফটোগ্রাফিক প্রযুক্তি যা কোনো বস্তুর ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল ইমেজ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা ত্রিমাত্রিক ছবি ‘হলোগ্রাম’ নামে পরিচিত। এই ধরনের ছবি তৈরির জন্য লেজার, ইন্টারফারেন্স ডিফ্র্যাকশন, লাইট ইনটেনসিটি রেকর্ডিং এবং ইলিউমিনেশন অব দ্য রেকর্ডিং এই চারটি প্রযুক্তির একটি কার্যকরী সমন্বয় ঘটানো হয়।

মাইক্রোসফট হলোগ্রাফির এ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে হলোলেন্স উৎপাদন ও বাজারজাত করার ঘোষণা দিয়েছে। হলোলেন্স আদতে একটি কম্পিউটার। যেটি পরিধানযোগ্য। গুগল গ্লাসের মতই এটিকে চোখে পরতে হয়। থ্রিডি সিনেমা দেখার জন্য আমরা যেমন থ্রিডি গ্লাস ব্যবহার করি। তেমনি করে হলোলেন্সও পরতে হবে। এটি আসলে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট। থ্রিডি গেমারদের জন্য এটি দারুণ কাজের হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এছাড়া সিমুলেশন দেখার জন্যও এটি কাজে দেবে।

হলোলেন্সের ব্যবহার
হলোলেন্সের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বলেন, ‘হলোলেন্স প্রযুক্তি ও অ্যাপ্লিকেশনস ব্যবহার করে কম্পিউটারের অনেক কাজই করা যাবে। এটি পরিধান করা মাত্রই একটা আশ্চর্য ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যে পরিবেশের ভেতরে থেকেই অ্যাপলিকেশন্স ডেভেলপারেরা কাজ করতে পারবেন।’

হলোলেন্স ব্যবহার করে স্কাইপে, গেম, অফিস অ্যাপ, ডিজাইন অ্যাপের কাজ চোখের সামনে কোনো মনিটর ছাড়াই করা যাবে। আর এসব প্রদর্শিত হবে ব্যবহারকারীর চারপাশের বস্তুকে আশ্রয় করেই। অর্থাৎ চোখের সামনের বস্তুতে প্রজেক্টরের মতো প্রদর্শিত হবে। ফলে অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমেই ব্যবহারকারী এটাকে নির্দেশ দিতে পারবেন।

মঙ্গল গ্রহে হলোলেন্স
হলোলেন্স বাজারে আসার আগেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন কি করে এটিকে কাজে লাগানো যায়। ইতোমধ্যে নাসার একদল গবেষক গবেষণা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নাসা এজন্য মাইক্রোসফটের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। এই দুইটি প্রতিষ্ঠান হলোলেন্সের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

নাসা এই হলোলেন্স ব্যবহার করে মঙ্গলের পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে। হলোলেন্সের ধারণাটা অনেকটাই সায়েন্স ফিকশনের মতো। হলোলেন্সের সঙ্গে থাকা সফটওয়্যার অনসাইট ব্যবহার করে মঙ্গল পর্যবেক্ষণে একে কাজে লাগাতে চান নাসার গবেষকেরা।

এই হেডসেট পরলে গবেষকেরা মঙ্গলের একটি হলোগ্রাফিক সিমুলেশন দেখতে পাবেন। এই সিমুলেশন তৈরি হবে নাসার কিউরিওসিটি রোভারের ধারণ করা তথ্য থেকে। একসঙ্গে অনেকে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তারা নিজেদের মধ্যে এবং কিউরিওসিটি রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এমনকি মঙ্গলের পৃষ্ঠেও এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে পারবেন। নিজেদের অফিসে বসেই মঙ্গলের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি পাবেন তারা। এর মাধ্যমে মঙ্গলকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

হলোলেন্স শুধু কঠিন কঠিন কাজ করে বেড়াবে এমন নয়। যারা দিনরাত গেমস নিয়ে পরে থাকেন তাদেরও কাজে দেবে এটি। হলোলেন্স পরিধান করে ত্রিমাত্রিক গেমসের সিমুলেশনের মজাটা নিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

ঠিক কবে নাগাদ হলোলেন্স বাজারে আসবে এটা নিশ্চিত নয়। মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১০ যখন বাজারে আসবে তখনই হলোলেন্সের চূড়ান্ত সংস্করণ বাজারে ছাড়াও পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে উইন্ডোড ১০ চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাজারে আসার কথা আছে।



মন্তব্য চালু নেই