হাসপাতালে পিঁপড়ার কামড়ে নবজাতকের মৃত্যু!

সিলেটের একটি হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের অসাবধানতায় পিঁপড়ার কামড়ে এক নবজাতকের করুণ মৃত্যু ঘটেছে। নবজাতকটির বয়স ছিল মাত্র ২ দিন। জন্মের পর তার নামও রাখা হয়নি।

গত শনিবার সিলেট নগরীর আম্বরখানা খাসদবীরের একটি বাসায় দুপুর ১২টায় তার জন্ম হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় ভর্তি করা হয় নগরীর জালালাবাদে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চমতলার শিশু ওয়ার্ডে। সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হয় নবজাতককে।

পরদিন রোববার নবজাতকটিকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। আর সোমবার দুপুরে আইসিইউ ওয়ার্ডে পিঁপড়ার কামড় আর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলায় নবজাতকটির করুণ মৃত্যু ঘটে।

পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আইসিইউতে নবজাতকটিকে দেখতে গতকাল বেলা ২টায় প্রবেশ করে শিশুটির ফুফু অ্যাডভোকেট নীলিমা ইয়াসমিন মুক্তা। প্রথমে তাকে আইসিইউতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বারণ করা সত্ত্বেও তিনি এ সময় আইসিইউতে প্রবেশ করেন। এ সময় দেখতে পান নবজাতকটির নাকের ওপর একটি পিঁপড়া কামরে ধরে আছে। সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারীদের তিনি বলেন, ‘ওর নাকের ওপর পিঁপড়া কেন? ও তো নড়ছে না। ওকি মারা গেছে?’ জবাবে তাকে বলা হয়, ‘আপনে এখানে কেন ঢুকলেন? বাইরে যান।’

সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নবজাতকটির গায়ের চাদর সরালে অ্যাডভোকেট মুক্তা দেখতে পান নবজাতকটির সমস্ত শরীরে কয়েকটি পিঁপড়া। তার নাভির নরম স্থানে ছোট ছোট লাল রঙের অসংখ্য পিঁপড়া। এর কিছুক্ষণ পরই পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়, নবজাতকটি আর বেঁচে নেই।

অ্যাডভোকেট মুক্তা দাবি করেন, তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ আল মামুনের ২ দিনের পুত্রসন্তানের মৃত্যু হয়েছে নিবিড় পরিচার্যা কেন্দ্রে থাকা পিঁপড়ার কামড়ে আর কর্তব্যরতদের দায়িত্বের অবহেলায়।

তিনি বলেন, ‘নবজাতকটি বেলা ২টার দিকেই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ওই সময় শিশুটির শরীরে অনেক পিঁপড়া ছিল। ও নড়ছিল না। কিন্তু রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ওর মৃত্যুসনদ দিয়েছে বিকেল সোয়া ৫টায়। তারা সবকিছুতেই অবহেলা করেছে। তাদের অবহেলায় আমার ভাইয়ের ছেলেকে হারাতে হলো।’

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেছেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মুক্তা। আইসিইউতে পিঁপড়া দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছেন, বলেন তিনি। এ ঘটনায় রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছেন। কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগও করেছেন। কর্তৃপক্ষ দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।

গতকাল রাতে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) নাজমুল ইসলাম, সিলেট জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক অশোক পুরকায়স্থ, সিলেটের ডাক পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক দেওয়ান তৌফিক মজিদ লায়েক, কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস ও ৩০/৩৫ জন আইনজীবী নবজাতকটির মৃত্যুর ঘটনায় বৈঠক করেছেন।

এ ব্যাপারে জেলা বারের সভাপতি রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু বলেন, ‘ঘটনাটি স্পর্শকাতর। আমাকে বিকালে অ্যাডভোকেট নীলিমা ইয়াসমিন ফোন করে জানান, তার ভাইয়ের ছেলে মারা গেছে। আমিসহ ৪০/৪৫ জন অ্যাডভোকেট হাসপাতালে যাই। পরে মেডিকেল কলেজের প্রধান অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) নাজমুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করলে তিনি ওই বিভাগের সকলকে বহিষ্কার করেন। অ্যাডভোকেট নীলিমা এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার বারের সভাপতিকে ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের জানানোর কথা রয়েছে।’

অধ্যক্ষ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নবজাতকটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি করা হয়। নিহত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব।’

এ ঘটনায় শিশু বিভাগের সবাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবাইকে বহিষ্কার করার প্রশ্নই ওঠে না। দু-তিনজন নার্সকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ব্যবস্থা কী নেওয়া হয়েছে, তা লিখিতভাবে সিলেট জেলা বারের সভাপতিকেও জানানো হবে।’



মন্তব্য চালু নেই