৬৫০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হবে রেললাইন
আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত পাশাপাশি দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং অপরটি বিদ্যমান মিটার গেজকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটি ছাড়াও একনেকে আরো সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন এবং দুটি সংশোধিত। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে জিওবি ২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ডুয়েল গেজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে পাশাপাশি যে দুটো রেললাইন নির্মাণ করা হবে তার মোট দৈর্ঘ্য ১৪৪ কিলোমিটার। এছাড়া, লুপ ও সাইডিংস লাইনের জন্য আরো ৪০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন তৈরি করা হবে। মোট ১৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুয়েল গেজ লাইন নির্মিত হবে। এ নির্মাণ কাজে মোট ব্যয়ের ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা সরকার দেবে। বাকি ৫ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ঋণ সহায়তা করবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে অচিরেই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি প্রধান করিডোরে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ সুবিধা দিতে পারবে। এতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনের ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালে শেষ হবে। সেই সঙ্গে আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডাবল ডুয়েল গেজ হয়ে গেলে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ডাবল ডুয়েল গেজ হয়ে যাবে। ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের চাহিদা মেটানো সহজ হবে।’
এছাড়া ‘প্রি পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ৫ এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি’ নামক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা পাওয়ার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি এলাকায় প্রি পেমেন্ট মিটারিং চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ফলে খিলগাঁও, তেজগাওঁ, কাজলা, কামরাঙ্গীরচর এবং স্বামীবাগ এলাকার বাসিন্দারা এখন কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেমের (সিটিএস) মাধ্যমে স্মার্টকার্ডভিত্তিক সিঙ্গেল অথবা থ্রি ফেইজের প্রি পেমেন্ট মিটার কিনে প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি মোবাইল কার্ডের মতো টাকা দিয়ে অগ্রিম বিদ্যুৎ মিটার কিনে নিজের প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রকল্পটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ফলে বিদুত্যের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও কোনো বকেয়া থাকবে না। সেই সঙ্গে লোডশেডিংও কমে আসবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২২৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে জিওবি ১৮৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৩৫ কোটি টাকা। জানুয়ারি, ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।’
এছাড়া কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার এবং ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িয়ে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং পেশাকে দেশব্যাপী আরো সম্প্রসারণ করছে সরকার।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার মনে করছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে ভালভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্যে সরকার দেশের ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজারটি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করতে যাচ্ছে। একেকটি কম্পিউটার ল্যাবে কমপক্ষে একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি এলইডি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, একটি হেডফোন ও একটি করে থ্রিজি পকেট রাউটার থাকবে। এছাড়া, দেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিকে ছড়িয়ে দিতে ৬৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলায় একটি করে ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করবে সরকার।’
এবিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এ সফল হতে হলে বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারাও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে এ খাতটি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাতে পরিণত হবে। সেজন্যে আমরা কম্পিউটার শিক্ষাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্যই দেশে বিদ্যমান ৩ হাজার ৫৪৪টি কম্পিউটার ল্যাবের সঙ্গে আরো ২ হাজারটি কম্পিউটার ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’
মন্ত্রী জানান, ৬৪ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২৯৯ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে।
এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানাসহ শিল্প কারখানায় দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করবে সরকার। মূলত আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরিত করে তা শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তরের জন্য মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দরে এলএনজি টার্মিনাল তৈরির কাজ চলছে ।
অপরদিকে, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও হবিগঞ্জে জ্বালানী সঙ্কট মেটাতে বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের অতিরিক্ত গ্যাস এসব এলাকায় সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩৭ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।
সভায় ‘মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ এবং বিবিয়ানা-ধানুয়া গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প (২য় সংশোধিত) শীর্ষক দুটো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথম প্রকল্পের জন্য ৯৮১ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এছাড়া ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প’, ‘মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৪র্থ পর্যায়)’ এবং ‘স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ নামের তিনটি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্তব্য চালু নেই