‘জঙ্গিবিরোধী সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ বাংলাদেশেই’
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীতে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ বাংলাদেশই নিয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না মন্তব্য করে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরকে তরুণ-যুবকদের ওপর নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকা বিভাগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ছয় হাজারেরও বেশি স্থানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।
এই মত বিনিময় একমুখী ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শুরুতে তার বক্তব্যের পর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশেই তৃণমূল পর্যায় থেকে কথা বলেছেন একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি বা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে তাদেরকে বক্তব্য না দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক বক্তব্যের আগে ঢাকা বিভাগে সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে একটি বর্ণনা দেয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীও বলেন তার সরকারের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী জনমত গঠনের বিষয়টি নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা হচ্ছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উত্থান। বাংলাদেশে যদিও আমরা, আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি।… আমরা যে কোনোভাবে এটা দমন করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যার ফলে আমরা আমরা অনেক বড় বড় বিপদ থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি।’
জঙ্গিবিরোধী সাম্প্রতিক অভিযানের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ পারেনাই, বাংলাদেশ তা করে যাচ্ছে।’ কিন্তু আমাদেরকে এখানে থেমে থাকলে হবে না-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।’
স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কে অহেতুক অনুপস্থিত দীর্ঘদিন সেসব বিষয়গুলো তদারকি করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কী করে সেটা দেখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তাদেরকে বোঝাতে হবে। তারা যেন ধ্বংসাত্মক ও আত্মঘাতী পথে না যায়, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষিত বিশেষ করে ধনী পরিবারের সন্তানরা কেন বিপথে চলে যাচ্ছে-সেটার কারণ খুঁজে বের করতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের যাদের মেধা, তাদের শক্তি, তাদের মনন, কাজ করার ক্ষমতা দেশের ভাল কাজে লাগতে পারতো, সেটা ধ্বংসাত্মক কাজে কেন যাবে?’।
ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনও সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামে কখনও নিরীহ মানুষ মারার কথা বলা হয়নি। নিরীহ মানুষ হত্যা করা সবচেয়ে বেশি গুনাহের কাজ।’ যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে, তারা জান্নাতে যায় না, তারা জাহান্নামে যায়-এমন মন্তব্য করে তিনি বলে, ‘এটা আমাদের নবী করিম (সা.) ও বলে গেছেন। আমাদের ইসলাম ধর্মেও আছে।’
জঙ্গিবাদীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আসলে ইসলামকেই হেয় করছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক বিপথগামী, যারা ধর্মের নাম করে খুন করে, তারা ধর্মের মান, মর্যাদা, সম্মান, সব কিছু এবং এর মূল চেনতাটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
মন্তব্য চালু নেই