একটি দেশ শুধু প্রবৃদ্ধিই নয় উচ্চমানের গণতন্ত্রও চায়

ঢাকা সফররত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে প্রচুর সুযোগের পাশাপাশি প্রচুর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এ দেশের উন্নয়নে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ দরকার। শুধু প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিনিয়োগ করলে হবে না। উচ্চশিক্ষায়ও বিনিয়োগ করতে হবে, যার মাধ্যমে পেশাদার তৈরি হবেন।

চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বর্তমানে সব পরিমাপকে একত্রে পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। আমি আশাবাদী আমরা পরবর্তী ধাপে একত্রে পৌঁছাতে পারব। আমাদের অবকাঠামো, জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। একটি দেশ শুধুই উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি চায় না। সেই সঙ্গে উচ্চমানের গণতন্ত্রও চায়।

এ বিষয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি গণতন্ত্রের সব সুবিধাই সমাজে তৈরি করতে পারেন। সময়মতো নির্বাচন হতে পারে। এতে নির্বাচনী প্রার্থীর বা আইন-শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করে গণতন্ত্রকে তৈরি করতে পারেন। তা গণতন্ত্রের মতোই দেখতে। এটি খারাপ সরকার তৈরি করে, যা ব্যবসার জন্যও খারাপ।

এ ধরনের গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে ভুল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিষয়টি আসলে গণতন্ত্রের মান নিয়ে। শুধু নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা নয়। আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার ও বিচারকে সহজলভ্য করা। এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রকে মানসম্পন্ন করে। বর্তমান বিশ্বের সবখানেই এ ধরনের গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে।

বিশ্বে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জের কথায় তিনি বলেন, বিশ্বের কোনও দেশই দুর্নীতির বাইরে নয়। পুরো বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিকরা নিজ নিজ দেশের সেবা করার জন্য এসেছে। নিজের সেবা করার জন্য নয়। যদি কেউ মনে করে যে, ছোট ছোট দুর্নীতি ঠিক আছে। তবে তার ধারণা ভুল। এটি রাজনীতির উপর মানুষের বিশ্বাসকে নষ্ট করে। রাজনীতিবিদদের নিজের জন্য নয়, দেশের সেবায় কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের উত্থান এমন একটি চ্যালেঞ্জ যা আমরা একত্রে মোকাবেলা করছি। আর অবশ্যই আমাদের এ জঙ্গিবাদকে হারাতে হবে। এ জন্য আমাদের মিলিটারি শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে। তবে বড় যুদ্ধ আমাদের এক্ষেত্রে করতে হবে। আর তা হলো পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের সকল ধর্মের মানুষকে এক হতে হবে।

তিনি বলেন, সিরিয়া ও ইরাকে আইএস এ ধারনাই দেয়া চেষ্টা করছে যে, সকল ধর্মের মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারবে না। একত্রে কাজ করতে পারবে না। একত্রে চলাচল করতে পারবে না। ফলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু মিলিটারি সংগ্রাম নয়। এটি শুধু কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম নয়। এটি আসলে একটি আদর্শিক সংগ্রাম। এটি এমন একটি সংগ্রাম যা ইসলামের মতো শান্তির ধর্মের অনুসরণকারীদের, যার প্রভাব কোটি কোটি অনুসারীদের উপর পড়েছে। কিছু মানুষ ইসলামকে কুলষিত করার চেষ্টা করছে। আইএস’র এ যুদ্ধ কোনও সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ সকল ধর্মের বিরুদ্ধে।

ক্যামেরন বলেন, বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমাদের অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য মিলিটারিসহ অন্যদের সংগ্রাম করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় যে সংগ্রাম করতে হবে তা হলো জনগনের হৃদয়ে স্থান করে নিতে হবে। এজন্য স্বাধীন, মুক্ত, পরমতসহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে জনগণের সামনে তুলে ধরার ভিশন থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরো বিশ্বে আমাদের বন্ধুত্ব কমে আসবে না, বরং আরও শক্তিশালী করা হবে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে যুক্তরাজ্য বেশ গুরুত্ব দেয়। ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে অবদান রাখছে, যা আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে।

গুলশানের ফোর পয়েন্ট হোটেলে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ-২০১৭’ শীর্ষক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সাবেক এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রায় ১৩ মিনিটের বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডেভিড ক্যামেরন। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের সফরে বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সাবেক ব্রিটিশ এ প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে একটি তৈরি কারখানা পরিদর্শন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাতেই তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই