সংসদ নির্বাচনের আগেই ছয় সিটিতে ভোট, ডিসেম্বরে রংপুর
আগামী বছরের শেষে বা ২০১৯ সালের প্রথমেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনের আগেই ছয়টি (রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর) সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরেই করা হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
ইসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনের পর আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে বাকি পাঁচ সিটিতে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো উপনির্বাচন থাকলে সেগুলোতেও ভোট করে ফেলতে চায় কমিশন।
সূত্র জানায়, রংপুর সিটিতে ভোট হয়েছিল ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর, চার সিটিতে (রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট) ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ জুন এবং গাজীপুর সিটিতে ভোট হয়েছিল একই বছরের ৬ জুলাই। নিয়ম অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনে শপথ নেওয়ার পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এর মেয়াদ থাকে। আর এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের ১৮০ দিনের মধ্য নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সম্ভবত রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে। চলতি বছরের জুন থেকে আগামী বছরের জানুয়ারি মধ্যে এই সিটিতে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানুয়ারি মাসের আগেই নির্বাচনটা আমাদের করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের সময় হলো নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। এই সময়ের পরে গেলে এসএসসি পরীক্ষা, আবার আগে গেলে বর্ষা থাকে। নভেম্বর মাসটায় আবার স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা থাকে। এই সিটি নির্বাচনের জন্য আমার দৃষ্টিতে ডিসেম্বর মাসটাই অ্যাপ্রোপ্রিয়েট।
এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী বছর আরো পাঁচটি (রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রয়েছে। তাছাড়া বাই ইলেকশন থাকলে সেগুলোও সংসদ নির্বাচনের আগে করে ফেলবো। এছাড়া আর কোনো বড় নির্বাচন সংসদের আগে নেই। আর আগের মতো এবারও চার সিটিতে (রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট) একই সঙ্গে নির্বাচন করার পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত কমিশনের রয়েছে, বলেন তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ ও ছোট ছোট যে নির্বাচনগুলো আছে- এর চাবি ইসির হাতেই থাকবে না অন্য কেউ কলকাঠি নাড়াবেনা জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, চাবি নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকবে। কারো কাছে যাবে না।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি কমাতে কমিশন কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যে প্রশিক্ষণগুলো হচ্ছে, সেখানে আমাদের নির্বাচন কমিশনার মহোদয়রা যাচ্ছেন, ডিসি এসপি এরা যাচ্ছেন, এছাড়া রিটার্নিং অফিসার তাদের সাথেই আছেন। তাদের কাছে একটা মেসেজ পৌঁছে দেওয়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা কামনা করা এবং তাদের যেকোনো অসুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া। এটা তাদেরকে আশ্বস্ত করা এবং তারা বুঝতেও পারছে যে, তারা মেসেজ দিয়ে সরাসরি অ্যাকশন পাচ্ছে। এটা উল্লেখ করতে পারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রিজাইডিং অফিসারদের মোবাইল নাম্বার আমাদের কাছে ছিল। এমন একটা সিস্টেমও আমরা তৈরি করেছিলাম। এসএমএসের মাধ্যমে আমাদের পরিস্থিতি জানাতে এবং সেই পরিস্থিতি জানানো পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, কোনো নির্বাচনকে আমরা ছোটভাবে দেখছি না। ছোট ছোট প্রায় নির্বাচনেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন। এতে বুঝতেই পারা যায়া এরা কতটুকু গুরুত্বের সাথে এ নির্বাচনগুলো দেখছেন।
পুরো কমিশনের মাঠ পর্যায়ে যাওয়ার উদ্দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব বলেন, মেসেজ একটাই সুষ্ঠু, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। অতীতের মতো যাতে মারামারি, কাটাকাটি, জবর দখল, আগেই ব্যালটে সিল পেটানো এগুলো যাতে না ঘটে এই আশ্ব্যস্ত করার জন্যই আমরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যারা আছেন রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার তাদের কাছে একটা ম্যাসেজ দেওয়ার জন্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছেন তাদের কাছেও একটা ম্যাসেজ পৌঁছে দেওয়া যে নির্বাচন কমিশন তাদের সাথে আছে। তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য আছে। তারা অপরাধ করলেও তাদেরকে শাস্তি দিতে নির্বাচন কমিশন পিছপা হবে না এই ম্যাসেজ গুলোই নির্বাচন কমিশন দিয়ে আসছে।
ইসি সূত্র জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা-১ এবং সুনামগঞ্জ-২ শূন্য আসনের নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ১২টি উপজেলা, ৫৯টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনসহ প্রায় ২০০টি নির্বাচন করেছে।
মন্তব্য চালু নেই