দীর্ঘ ১৩ মাসেও চিহ্নিত হয়নি তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা
‘তনু একজন নিরীহ পিয়নের মেয়ে, তাই বলে কি আমরা বিচার পাব না? সে সেনা অফিসারের মেয়ে হলে তো এতদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়ে যেত।’
দীর্ঘ ১৩ মাসেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা চিহ্নিত ও গ্রেফতার না হওয়ায় এমনই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৩ মাস পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে তনুর ঘাতকরা। অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে মামলার তদন্ত কার্যক্রম। ঘটনার পর থেকে তদন্তকারী সংস্থা একাধিকবার পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে কুমিল্লা সিআইডি।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ তনুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তাদের সেনানিবাসের বাসায় যান। এসময় ঢাকা থেকে সেলফোনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আখন্দ তনুর মা ও চাচাতো বোন লাইজুর সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ ১৩ মাস একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতে যেতে চান তনুর পরিবার।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি।
গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল।
এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের সনাক্ত করতে না পারায় মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম সেলফোনে জানান, আমরা ন্যায় বিচারের কোনো লক্ষণ দেখছি না। ঢাকা থেকে সিআইডির আখন্দ সাহেব মোবাইলে তনুর চাচাতো বোন লাইজুর সঙ্গে কথা বলেছেন। এসময় তিনি তনুর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। এসব তথ্য এর আগেও অনেকবার আমরা সিআইডিকে বলেছি। নতুন করে কেন বার বার এসব তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
তনুর মা বলেন, ‘কাকে গ্রেফতার করলে তনু হত্যার রহস্য বের হবে তা আমি অনেক বার সিআইডিকে বলেছি। প্রয়োজনে বিচারের দাবি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাব। মেয়ে হারিয়েছি, এখন আর কিছু হারানোর ভয় করি না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমি ন্যায় বিচার চেয়েও পাচ্ছি না, দেশের ১৬ কোটি লোকও তনু হত্যার বিচার চায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, কিছুটা অগ্রগতি আছে, মামলাটি তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
মন্তব্য চালু নেই