প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্ত লোকজনকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য কার্যকর নীতি এবং কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে আমাদের। আসুন, আমরা তাদের বহুমুখী প্রতিভাকে স্বীকৃতি প্রদানে সংকল্পবদ্ধ হই, যাদের এ অসামঞ্জস্যতার কোনৈা চিকিৎসা নেই তাদের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দেই। যাতে তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে ভুটানে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে, সূচনা ফাউন্ডেশন ( পূর্বের নাম গ্লোবাল অটিজম), অ্যাবিলিটি ভুটান সোসাইটি (এবিএস) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় রয়্যাল ব্যাংকুয়েট হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে।

এবারের কনফারেন্সের থিম হচ্ছে- ‘এএসডি ও অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য কার্যকর ও টেকসই বহুমুখি কর্মসূচি’। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তৃতা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী লিয়নপো তানদিন ওয়াংচুক সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

এ সেশনের প্যারেন্ট স্পিকার ছিলেন চিম্মী লাদেন। সেন্ট্রোল অ্যান সুলেভান দেল পেরু’র প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী পরিচালক ডা. ইয়োল্যান্ডা মায়া ওর্তেগা ‘ দুটি পরিবারের সদস্য এবং পেশাজীবীদের সম্মিলিতভাবে কার্জ সম্পাদনে অটিজম আক্রান্তরা কিভাবে স্বনির্ভর, উৎপাদনমুখী এবং সুখী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে’ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

ভুটানের রাণী জেটসান পেমা, সূচনা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভুটানের ঐতিহ্যবাহী মার্চাঙ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কনফারেন্সের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘ঝুঁকির মুখে থাকা নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান করা সকল দেশের জন্যই প্রয়োজনীয় এবং সরকারগুলোর উচিত এজন্য নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা। যাতে করে কোনো নাগরিকই যেন অবহেলার স্বীকার না হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা (অটিজম আক্রান্তরা) দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার সুযোগের দাবিদার। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদেরই কর্তব্য তাদের জন্য জীবনের প্রতিটি স্তরে শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সামাজিক ও মেডিকেল সাহায্য প্রদান করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) বিষয়ে অর্থনৈতিক এবং কারিগরিভাবে সীমাবদ্ধ দেশগুলোর কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কাঠামোগত পদ্ধতি নির্ধারণের সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাদেরকে দিক-নির্দেশনা প্রদানের মত কোনো মডেল বা নির্দেশিকা এতদিনেও তৈরি হয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে আন্তঃদেশিয় বা অন্তঃদেশীয় কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করাটা খুব জরুরি। আর এটার ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সকল দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে অটিজম এবং অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো ছাড়া সার্ভিস ডেলিভারি মডেল কখনও কার্যকর হতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে পর্যাপ্ত এবং অদূর ভবিষ্যতের জন্য ও টেকসই-মজবুত হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে ডাটার স্বল্পতা, সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন, প্রমাণভিত্তিক ইন্টারভেনশন কর্মসূচি, বিদ্যমান থাকা কর্মসূচি এবং সেবার বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ উল্লেখযোগ্য। এজন্য কখনো কখনো মানসম্পন্ন কর্মসূচিও বড় বড় শহর কেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর বাইরে পৌঁছাতে পারে না কিংবা তাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে গৃহীত সমন্বিত মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাকশন প্লান ২০১৩-২০২০’তে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে, এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক অসাঞ্জস্য দূর করতে হলে ‘গ্যাপ’ চিকিৎসা পদ্ধতিকে আরো জোরালো করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে দেশগুলোর জন্য করণীয় ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং এজন্য বিভিন্ন টুল গ্রহণ এবং বর্জন করার সক্ষমতা, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা এবং সার্ভিস উন্নয়নের স্বল্পতা আমাদের কর্মপ্রয়াসকে অর্থনৈতিকভাবে এবং নৈতিকভাবে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোতে বিঘ্নিত করছে।



মন্তব্য চালু নেই