আজও পরিবহন কম, হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সোমবারও আগের দিনের মতো গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। বাস চালকরা বলছেন সিটিং সার্ভিস বন্ধ করায় মালিকরা ইচ্ছা করেই রাস্তায় কম গাড়ি নামিয়েছেন।
তবে সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রী হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলার কারণেই মালিকরা রাস্তায় কম গাড়ি নামিয়েছেন বলে মনে করেন যাত্রীরা। ফলে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে।
সোমবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, মুগদা, মতিঝিল, পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে সকাল ৯টার দিকে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ ছিল। কিন্তু পরিবহন ছিল হাতেগোণা। ফলে অফিসগামীদের অনেকটা যুদ্ধ করেই গাড়িতে উঠতে হয়েছে।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রায় গাড়িশূন্য হয়ে পড়ে যাত্রাবাড়ী মোড়। গাড়িতে উঠতে না পারায় মতিঝিল-গুলিস্তান এলাকার যাত্রীদের অধিকাংশই গন্তেব্যের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা দেন।
এদিকে, সড়কে যেসব গাড়ি আছে সেগুলোর সবগুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এজন্য যাত্রাবাড়ী মোড়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্তও দাঁড়িয়ে থাকছে কোনো কোনো রুটের বাস।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে পান ও সিগারেটের দোকানি মো. ইসমাইল বলেন, আজ গাড়ি গতকালের (রোববার) থেকেও কম চলছে। সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়ার কারণে এই অবস্থা। আর গাড়ি কম চলার কারণে মানুষও রাস্তায় কম বের হচ্ছে। সকালের দিকে যারা অফিসের উদ্দেশে বের হন, তাদের অধিকাংশই হেঁটে গেছেন।
হেঁটে মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান শিপলু বলেন, গাড়িতে উঠতে পারছি না। তাই হেঁটে অফিসে যাচ্ছি। রিকশা চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছেন। আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মতিঝিল যাওয়া যেত। আজ রিকশা চালকরা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ভাড়া চাচ্ছেন।
আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা ভাড়া চাচ্ছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাই রিকশা বা অটোরিকশায় না গিয়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছি-বলেন তিনি।
অন্যদিকে, রোববারের মতো সোমবারও বাসে উঠতে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। পরিবহন কম থাকায় পুরুষদের সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ করেই বাসে উঠতে হচ্ছে নারীদের। ফলে অধিকাংশ নারীই গাড়িতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আবার নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রী বসানো হচ্ছে।
লাব্বাইক পরিবহনের শ্রমিক মো. আরিফুল বলেন, রাস্তায় মালিক আজ গাড়ি কিছু কম নামিয়েছেন। কারণ সিটিং সার্ভিস নেই। তাই গাড়িতে যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেয়া হচ্ছে। আগে এক গাড়িতে যে যাত্রী বহন করা হতো আজ গাড়িতে তার ডাবল যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এ কারণেই হয়তো মালিকরা রাস্তায় কম গাড়ি নামিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের যেভাবে চলতে বলবে, আমরা সেভাবেই চলব। সিটিং বন্ধ হলে যাত্রীদেরই সমস্যা বেশি। কারণ আগে যে ভাড়া দেয়া লাগত, এখনো সেই ভাড়াই দিতে হচ্ছে। কিন্তু যেতে হচ্ছে কষ্ট করে। আর যাত্রী গাদাগাদি করে নিলে আমাদের ভাড়া কাটতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু সিটিং চললে ভাড়া কাটতে কোনো সমস্য হয় না।
মিরপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী বেস্ট ট্রান্সপোর্ট আগে যাত্রাবাড়ী থেকে সকালে সিটিং সার্ভিস হিসেবে যাতায়াত করত। রোববার থেকে এ পরিবহনটি লোকাল চলছে। আগে যে স্থান থেকে যাত্রী তোলা হতো এখন সেই স্থান থেকেই যাত্রী তুলছে বেস্ট ট্রান্সপোর্ট। তবে লাইনে দাঁড়ানোর বদলে যাত্রীরা যে যেভাবে পারছেন, সেভাবে গাড়িতে উঠছেন।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে ১০ মিনিটের মধ্যে বেস্ট ট্রান্সপোর্টের সবকটি সিট যাত্রীতে ভরে যায়। কিন্তু এরপর চালক গাড়ি চালানো শুরু না করে হেলপার ও স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের দিয়ে আরও যাত্রী ডাকতে থাকেন। এক পর্যায়ে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠানোর পর সাড়ে ১০টার দিকে চলতে শুরু করে বাসটি। অথচ সিটিং সার্ভিস বন্ধের আগে ১০ মিনিট পরপর যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যেত বেস্ট ট্রান্সপোর্ট-এমনটাই জানালেন যাত্রীরা।
ওই গাড়ির চালক মো. আগজর আলী বলেন, আমাদের যেভাবে চলতে বলছে, সেভাবেই চলছি। লোকাল গাড়ির নিয়ম হলো যাত্রী গাদাগাদি করে নিয়ে যাব। তাই আমরা গাদাগাদি করে যাত্রী তুলছি। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াও নিচ্ছি লোকালের মতো।
তিনি বলেন, আগে মতিঝিল যেতে ১৫ টাক ভাড়া নিতাম, এখন ১০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি। তবে ফার্মগেট পর্যন্ত আগে যে ভাড়া ছিল এখন তাই রয়েছে। ফার্মগেট পর্যন্ত আগে ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, লোকাল যাত্রী তুলেও ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই।
তবে সড়কে গাড়ি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু লোকাল হিসেবে যাত্রী তোলা হচ্ছে, তাই গাড়ি কম লাগছে। আগে যে গাড়িতে ৩০ জন যাত্রী যেতো, এখন সেই গাড়িতে ৬০ জনের ওপরে যাত্রী তোলা হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি কম থাকাই তো স্বাভাবিক। আমরা তো আর গাড়ি খালি রেখে চালাব না।
মন্তব্য চালু নেই