সত্য-সুন্দরের জয়ের প্রত্যাশায় মঙ্গল শোভাযাত্রা
অজ্ঞানতার অন্ধকার, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতাকে পরাভূত করে সত্য, সুন্দর, উদারতা, শুভবুদ্ধি আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশের ডাক দিয়ে নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিল লাখো মানুষ। এবারই প্রথমবারের মতো রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে সারা দেশে। ঢাকাতেও কেন্দ্রীয়ভাবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় স্কুল বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয় এই শোভাযাত্রা।
সকাল নয়টার কিছুক্ষণ পর চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। ভোর থেকেই চলছিল এর প্রস্তুতি। নানা রকম শিল্পকর্ম নিয়ে বের হয় এই শোভাযাত্রা। হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়।
এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নেয়া হয়েছে কবিগুরু বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি চরন, ‘আনন্দ লোকে, মঙ্গলালোকে বিরাজ, সত্য-সুন্দর।’
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন করার কারণে এবারের শোভাযাত্রায় বাড়তি অনেক কিছু রয়েছে, ব্যবহৃত শিল্পকর্মের সংখ্যা অনেক বেশি। এবার নতুন একটি সূর্যের শিল্পকর্ম শোভাযাত্রায় যোগ হয়েছে। এর একপাশ আছে আলো আর অন্য পাশে অন্ধকার। আলো মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তি পথ দেখাবে এবং অন্ধকার থেকে বেরিয়ে সত্যর পথে, ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান জানানোর প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে এই আলো।
এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চলছিল। তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি শোভাযাত্রায়। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এসব অপপ্রচার আর কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান।
অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি অবস্থান ঘোষণা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। হাল আমলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থানে অসাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি জঙ্গিবিরোধী সচেতনতারও ডাক দেয়া হয়েছে এবারের শোভাযাত্রায়।
১৯৮৬ সালে পয়লা বৈশাখে যশোরে একটি সংগঠন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল। তিন বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এরপর বছর বছর এর পরিসর বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের অংশগ্রহণ।
১৯৮৯ সালে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঘোড়া ও মাঘের শিল্পকর্ম ব্যবহার করা হয়েছিল। এবার তা আবারও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সমুদ্র জয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতীকী শিল্পকর্মও ব্যবহার করা হচ্ছে এবারের শোভাযাত্রায়।
চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয় রূপসী বাংলা মোড় হয়ে আবার চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হওয়ার ঘোষণা ছিল আগেই।
মানুষের ঢল এত বেশি যে যখন শোভযাত্রার প্রথম অংশ রূপসী বাংলা পর্যন্ত চলে যায়, তখনও শোভাযাত্রার পেছনের অংশ ছিল চারুকলা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত।
মন্তব্য চালু নেই