বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে ফের সরকারকে সময়
অধস্তন আদালতের বিচারকদের আলাদা আচরণ ও শৃংখলাবিধির গেজেট জারির ক্ষেত্রে সরকারকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এই গেজেট জারির বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কথা বলে এই বিধির গেজেট জারি করতে আবারও সময় চেয়ে আবেদন দাখিল করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ নিয়ে গেজেট জারির ক্ষেত্রে গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে ১৫ দফা সময় চেয়ে আবেদন জানাল রাষ্ট্রপক্ষ।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ৭ম দফায় আলাদা আচরণ ও শৃংখলাবিধি প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটি আজও প্রণয়ন হয়নি।
এ অবস্থায় একাধিকবার আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃংখলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি কমিটি গঠন করে ওই খসড়া বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট জারির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শুনানিকালে গত বছরের ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগ বলেন, একটি খসড়া ডিসিপ্লিনারি রুলস তারা (সরকার) দাখিল করেছে। এটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এখন আমরা কমিটি করে একটি শৃংখলাবিধি তৈরি করে দিয়েছি। এটির আলোকে গেজেট জারি করে ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগকে জানাতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর সরকার একের পর এক সময় চাইতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত ডিসেম্বরে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে আপিল বিভাগে তলব করা হয়। ১২ ডিসেম্বর দুই সচিবকে হাজির হয়ে এই শৃংখলাবিধির গেজেট জারির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এ অবস্থায় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকগণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত আচরণ ও শৃংখলাবিধির খসড়া গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ব্যাপারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। ‘
১২ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব হাজির হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মাধ্যমে আদালতের কাছে এই পত্র তুলে ধরেন।
ওইদিন আপিল বিভাগ বলেন, ‘এটা কী লিখেছেন। আমরা তো খসড়া বিধিমালার কোনো প্রস্তাব দেইনি। মাসদার হোসেন মামলার ১২ দফা নির্দেশনায় এই আলাদা চাকরিবিধি তৈরির কথা আছে। ১৪ বছরেও এই বিধি তৈরি হয়নি। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ওই বিধির খসড়া আপনারাই তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন। সরকার যে খসড়া পাঠিয়েছিল মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই খসড়া সংশোধন করে দিয়েছি মাত্র। আমরা তো কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি। রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে। ‘
শুনানি শেষে আদালত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ওই শৃংখলাবিধির গেজেট জারি করার জন্য নির্দেশ দিয়ে ওইদিন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এরপরও দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় আবেদন করা হয়। সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষে চার সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ এক সপ্তাহ সময় দেন। সে অনুযায়ী আজ গেজেট জারির আদেশ বাস্তবায়ন না করেই রাষ্ট্রপক্ষ ফের সময় চেয়ে আবেদন দাখিল করে।
মন্তব্য চালু নেই