শ্রমশক্তি রপ্তানিতে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার
শ্রমশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। জটিলতা কাটিয়ে আবারো খুলতে যাচ্ছে কাতারের শ্রমবাজার। জাপান আগ্রহ দেখাচ্ছে পেশাজীবী নিয়োগে। আলোচনা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি বাজারে বেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১০ লাখ কর্মী বিদেশ পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থার কর্মকর্তা এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যই মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বেশি রেমিটেন্স আসে। শ্রমিকদের পাঠানো এই রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনশক্তির চাহিদা পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই রয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু দালালদের কারণে কিছু দেশের কাছে আমাদের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক পলিসির কারণেও আমাদের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু কিছু দেশে সমস্যা হচ্ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। অধিকাংশ দেশের কাছ থেকেই আমরা ভাল সাড়া পেয়েছি। এছাড়া নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করার জন্যও কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, এ বছরে ১০ লাখ কর্মী বিদেশের বিভিন্ন শ্রমবাজারে পাঠানো সম্ভব হবে।’
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। এই দুটি দেশের সাথেই সরকারের আলোচনা ইতিবাচক ভাবে এগিয়েছে। এর সঙ্গে বিনা খরচে পারস্য উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতারে পুরুষকর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনাও অনেকদূর এগিয়েছে। কাতার ফাউন্ডেশন এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে। ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
ব্যুরো সূত্র আরো জানিয়েছে, চলতি বছর দেশের জনশক্তি রপ্তানির হার বেড়েছে। শুধুমাত্র গত দু’মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) এক লাখ ৭০ হাজার ৬৭২ কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি গেছেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিএমইটি’র তথ্য মতে, গত বছরের এ সময়ে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে যান এক লাখ ২৬ হাজার কর্মী। সৌদিতে বাংলাদেশী দালাল চক্রের উৎপাত বন্ধ হলে কর্মী নিয়োগের হার আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। ছয় বছর বন্ধ রাখার পর ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশটি। তবে গত দেড় বছর নারী গৃহকর্মীদের পাশাপাশি শুধু গৃহ খাতের কর্মী নিচ্ছিল তারা। গত বছরের ১১ আগস্ট সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় সে দেশের শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এরপর সৌদি আরবে পুরুষ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রও আসতে শুরু করে।
জটিলতা কাটিয়ে আবারো খুলতে যাচ্ছে কাতারের শ্রমবাজার। ২০২২ সালে সে দেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ জন্য বিদেশি জনশক্তিকে কাজে লাগাতে চায় তারা। বিদেশি কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ কোটা বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, এক লাখ বাংলাদেশি কর্মীর জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারা সব সেক্টরেই কর্মী নেবে। তবে ঠিক কত সংখ্যক, তা এ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে বলা যাবে না। যদিও বিএমইটি বলছে, আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লক্ষাধিক কর্মী নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে কাতার।
এরই মধ্যে, কাতারে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, অভিবাসন ব্যয় কমানো, ভিসা ট্রেডিং বন্ধসহ, অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন অবকাঠামো বিনির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কাতারে অনেক কর্মীর প্রয়োজন হবে। সে চাহিদা পূরণসহ অন্য খাতেও বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার বিষয়ে দুদেশের সরকার জোর দিয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী ভিসা ট্রেডিং বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চাহিদাপত্র (ডিমান্ড লেটার) প্রথমে জমা পড়বে কাতারের ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক রিক্রুটমেন্টে। পরে ওই সংস্থা বাংলাদেশের বিএমইটির কাছে চাহিদাপত্রগুলো পাঠাবে। বিএমইটি ঠিক করবে, কোন এজেন্সি লোক পাঠাবে।
নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জাপানেও। এরই মধ্যে দেশটি ৬শ’ ডাক্তারসহ পেশাজীবী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে দেশটির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট নাগাদ জাপানে শ্রমশক্তি রপ্তানি শুরু হতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই