অবৈধ জিনিস শুরুর আগেই বাধা দেয়া উচিত : অ্যাটর্নি জেনারেল

একটি অবৈধ জিনিস শুরু করার আগেই বাধা দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আমি বলবো যেসব পরিবেশাবাদী এসব নিয়ে কাজ করেন তারা এই জায়গায় ভবন শুরু করার আগেই বাধা দেয়া উচিত ছিল। তারা তো জানতো এটা একটা অবৈধ জায়গা। তাই কোনো অবৈধ কাজ শুরুর আগেই বাধা দেয়া উচিত। তিনি বলেন, বাধা দেয়ার পর না মানলে তখন-ই তারা আদালতে আসার দরকার ছিল।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর্ট র সুপ্রিম কোআইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়া এই মন্তব্য করেন দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রী আর উদ্বোধন করেছিলেন অপর এক প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে, মনে হয় ওনাদের অবহিত করা হয়নি। যারা বিষয়টি জানতো তাদেরকে বাধা দেয়া উচিত ছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ওনারাতো রাষ্ট্রপ্রধান, তারা তো জানতো না, যারা এটার পারমিশন দিয়েছেন তারা তো বলেননি এটা জলাভূমি।’

রোববার আইনি লড়ায়ের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ধাপ রিভিউ খারিজ হওয়ার পর দেশের পণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকল না। এখন ভবনটি কতদিনের মধ্যে ভাঙতে হবে সে বিষয়ে আবেদন করার জন্য বলেছেন আপিল বিভাগ।

তব এ বিষয়ে মাহবুবে আলমে বলেন, এই ভবনটি দেশের রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ফলে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে মৌখিকভাবে তিন বছরের সময় আবেদন করা হয়েছিল। আমরাও এক বছর সময় চেয়েছিলাম। আদালত বিজিএমইএকে বলেছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে লিখিতভাবে আবেদন করতে। ওইদিনই আদালত বিজিএমইএকে ভবনটি ভাঙতে কতদিন সময় দেবে, সে বিষয়ে আদেশ দেবনে।

তিনি বলেন, ভবনটি হওয়ার সময়ই পরিবেশবাদীদের উচিত ছিল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। এখন ভবনটি হয়ে যাওয়ার পর এটি ঠিক না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে অালম আরও বলেন, চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে হার হওয়ায় দেশের প্রধান রফতানি পণ্যের শিল্পোদ্যোক্তাদের সমিতি বিজিএমইএর সামনে ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকল না।

রোববার বিজিএমইএর পক্ষে করা রিভিউ আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ খারিজ করে এই আদেশ দেন। সেইসঙ্গে বিজিএমইএ কার্যালয় সরিয়ে নিয়ে ভবনটি ভাঙতে কতদিন সময় লাগবে তা জানিয়ে একটি আবেদন করতে বলেছেন আদালত।

আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে শুনানি করেন কামরুল হক সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে ছিলেন মনজিল মোরসেদ। ভবন ভাঙার বিষয়ে বিজিএমইএর আরেক আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা তিন বছর সময় চাইব।

এর আগে, প্রায় দুই দশক আগে নির্মিত ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএর করা লিভ টু আপিল ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএকে অবিলম্বে নিজেদের খরচে ওই ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। তারা তা না করলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। সেক্ষেত্রেও ভবন ভাঙার টাকা তারা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করবে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ি খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কিনে নেয়।

তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছর বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৮ নভেম্বর শুরু হয় ভবন তৈরির কাজ। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিজিএমইএর ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।



মন্তব্য চালু নেই