র‌্যাব-পুলিশকে পাত্তা দিচ্ছে না পরিবহন শ্রমিকরা

র‌্যাব-পুলিশকে কেয়ার করছে না ধর্মঘটী পরিবহন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার বিকেলে থেকে রাজধানীর গাবতলীতে দফায় দফায় গাড়ি ভাঙছে, আগুন দিচ্ছে এমনকি র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গেও কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে তারা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় (সাকল ১০টা) র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। পুলিশ এসময় ঘটনাস্থলে থেকে কয়ক জনকে আটক করতে দেখা যায়।

সারা রাত শ্রমিকরা তাদের অবস্থান ছাড়েনি। রাতেই পুলিশ ফাঁড়ি এবং পুলিশের একধিক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার বিকেল থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশও দফায় দফায় লাঠিচার্জ ও টিয়ালশেল নিক্ষেপ করেও কার্যত ব্যর্থ হয় উত্তেজিত শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে। বেপরোয়া শ্রমিকদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না পুলিশ। এ পরিস্থিতিতে রাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র‌্যাব। দুটি বাহিনী একযোগে মধ্যরাতে অভিযান চালায়। কিন্তু তাতেও শ্রমিকরা তাদের অবস্থান ছাড়েনি।

বরং সকাল থেকে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে সড়ক অবরোধ করছে। সকালে থেকে গাবতলী এলাকায় একটি যানবাহন অতিক্রম করতে পারছে না। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনরতদের সঙ্গে বেশ কিছু কিশোর শ্রমিককেও দেখা গেছে।

অন্যদিকে, মোহাম্মপুর বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন শ্রমিকরা ৫টি প্রাইভেট কার সম্পূর্ণরূপে ভাঙচুর করেছে। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। অফিসগামী শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিন সকাল থেকেই গাবতলীর মাজাররোড মোড় ও আমিনবাজার সেতুর সামনে পুলিশের অবস্থান থাকলেও মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। রাস্তার একপাশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেডও তৈরি করেছে তারা। কোনো যানবহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অসুস্থ রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

সকাল থেকে এ পর্যন্ত দুটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢিল ছুঁড়ে সামনের ও পেছনের গ্লাস ভেঙে দিয়েছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা একজনকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শ্রমিকদের ছোড়া ঢিলে তিনি আহত হয়েছেন। রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও মোটরসাইকেল চলচল করতে দেখা গেছে। তবে শ্রমিকদের দেওয়া ব্যারিকেড ডিঙিয়ে তারা অন্য প্রান্তে যেতে পারছেন না।
সকাল থেকে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহীকেও মারধর করেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। রাস্তার দুইপাশে পুলিশ অবস্থান করলেও শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে পুরো গাবতলী এলাকা। থেমে থেমে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ছে এবং পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করছে।

এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে মাজার গলির সামনে মিরপুর শাহী মসজিদ ও মাদ্রাসার পাশে অবস্থান নিয়েছে র‌্যাব-৪-এর সদস্যরা। বেপরোয়া শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে। তবে শ্রমিকরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

গাবতলী এলাকায় অন্তত পাঁচটি স্পটে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছেই। কোনও যান না পেয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। এমনকি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী কোনও যানও এ রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না।

মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনালে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদেরকে পরিবহন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান শ্রমিক নেতা রুস্তম আলী খান। রুস্তম আলী খান জানিয়েছেন, যাবজ্জীবন ও ফাঁসির দায় মাথায় নিয়ে শ্রমিকরা গাড়ি চালাবেন না। তার দাবি, আইন বাতিল ও দুই চালকের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।



মন্তব্য চালু নেই