ধর্মঘটে একমাত্র ভরসা এখন ট্রেন, তাতেও চরম ভোগান্তি

সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে ট্রেন। ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এজন্য অনেক ট্রেন কিছুটা বিলম্বে ছাড়তে হচ্ছে। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের উপস্থিতি ঈদ যাত্রার দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। এতে টিকিট কাটা যাত্রীরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন তেমনি অতিরিক্ত যাত্রীদের চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ, দু’বগির সংযোগস্থল এবং ইঞ্জিনে উঠতে দেখা গেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খায়রুল আলম বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার যাত্রীরা এখন ট্রেনে চড়ছেন। রাজশাহীসহ এ অঞ্চলের প্রতিটি স্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে আসছে। প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রী উঠছে। এ যেন ঈদ যাত্রার চেয়েও বেশি ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রীবহনে বিভিন্ন ট্রেন অতিরিক্ত কোচ (বগি) সংযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পূর্বাঞ্চল রেলপথে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে জানিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আবদুল হাই জানান, যাত্রীদের চাপ বেড়েই চলছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনসহ ওই অঞ্চলের সব ক’টি স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তিনি বলেন, পর্যটক যাত্রীরাও এখন একমাত্র ট্রেনকেই বেছে নিয়েছে। পর্যটক যাত্রীদেরও ভিড় বেড়েছে। চলমান ধর্মঘট দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ না হলেও ট্রেনের ওপর চাপ ভয়াবহ আকারে বাড়বে। যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কাউন্টারের সামনে হাজার হাজার যাত্রী টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছে। ১৮টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকিট দেয়া হলেও ভিড় কমছিল না কিছুতেই। অন্যদিকে টিকিট না কেটে অধিকাংশ যাত্রী স্টেশনের ভেতর অবস্থান করছেন। স্ব স্ব গন্তব্যের ট্রেনগুলো স্টেশনে প্রবেশ করতেই হুড়মুড় করে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ট্রেনে উঠছে। ট্রেনের ভেতর ভরে উঠলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ, দু’বগির সংযোগস্থল ও ইঞ্জিনে উঠছে।

টিকিট কাটা একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে পারছেন না। প্রচণ্ড ভিড়। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা ট্রেনকেই এখন একমাত্র ভরসা ভেবে স্টেশনগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।

কমলাপুর রেল স্টেশন মাস্টার সিতাংশু চক্রবর্তী, স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন ঈদযাত্রার ন্যায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভিড়, যাত্রীদের লাইন এঁকেবেঁকে কাউন্টার ছেড়ে রাস্তায় গিয়ে ঠেকছে। যাত্রীরা স্রোতের মতো স্টেশনে ঢুকছে। কর্তব্যরত টিকিট চেকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করছেন বিনা টিকিটিদের ফেরাতে। অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী কিছু ট্রেন ২০ থেকে ৪০ মিনিট বিলম্বে চলাচল করছে।

ঢাকা রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি মো. ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ দিতে হয়েছে ভিড় সামলাতে। ভোর থেকেই স্টেশনে ভিড়, একেকটি ট্রেন এলেই হুড়মুড় করে যাত্রীরা ট্রেনে, ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে উঠছে। ছাদ ও ইঞ্জিন থেকে যাত্রীদের নামাতে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাদ ও ইঞ্জিন থেকে যাত্রীদের নামাতে পুলিশ কাজ করছে। কিন্তু পেরে উঠছে না।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে খুলনা থেকে ছাড়া সব রুটের ট্রেনগুলো ১ থেকে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। তবে আগের তুলনায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। যশোর জংশনে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যেখানে আড়াই লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হতো, ধর্মঘটের কারণে এখন প্রায় ৬-৭ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রচণ্ড ভিড়েও যাত্রীরা টিকিট কাটছেন। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কাউন্টারের সামনে যাত্রীরা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন।

রেলপথ সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ট্রেন সব সময়ই সাধারণ মানুষের নিরাপদ ও সাশ্রয় বাহন। হরতাল কিংবা ধর্মঘট, বন্যা কিংবা যে কোনো দুর্যোগেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। এ সময়টুকুতে যাত্রীদের সেবা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। অতিরিক্ত যাত্রীদের সুবিধার্থে কোনো কোনো ট্রেনে অতিরিক্ত বগিও সংযোগ করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই