দীর্ঘদিন সুযোগ-সুবিধা নেয়া অনেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কমিটির সদস্যদের। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ভিড়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা নিয়েছেন, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, যাদের ছেলেমেয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এতদিন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তাদের অনেকেই ভুযা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, অনেক স্থানে নতুন তালিকাতেও আবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ঢুকছে টাকার বিনিময়ে। এ নিয়ে সারাদেশেই কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন এলাকায় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, সমাবেশ ও পাল্টা সমাবেশের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই-বাছাই কমিটিতে আছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আবেদনকারীদের ফরম যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে অনুমান করা গেছে আবেদনকারীরা অনেকেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। আবার যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, ভাতা নিচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের জন্য সুবিধা নিচ্ছেন, তারাও অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে এতদিন সরকারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন, ইন্টারভিউতে তারা কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না। যেসব অস্ত্র তারা ব্যবহার করেছেন সেসব অস্ত্রের নাম এবং যন্ত্রপাতির কথাও বলতে পারছেন না অনেকে।তিনি বলেন, ইন্টারভিউতে যে ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তারা নিশ্চিত উত্তর দিতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুরের নকলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রতিবাদে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিএলএফ এর(মুজিব বাহিনী) মো. নুরুজ্জামান বলেন, যাচাই-বাছাই শুরু হওয়ার আগে আবেদনকারীদের চিঠি দেননি নকলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার, বরং তিনি বিএলএফ প্রশিক্ষক ও আবেদনকারীর সহযোদ্ধাদের সাক্ষ্য দিতে নিষেধ করেন। এমনকি তিনি অনেককে এই বলে ভয় দেখান যে, সাক্ষ্য দিলে তাদের নাকি মাসিক সম্মানি ভাতাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেননি। অনেক সাক্ষী সাক্ষাৎকার স্থলে এসেও চলে যান। পরিচিত সহযোদ্ধা ছাড়া সাক্ষ্য নেয়ার নিয়ম না থাকলেও বিএলএফ সদস্যদের অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে সাক্ষাৎ নেয়া হয়। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণ থাকার পরও নকলায় বিএলএফের ৬৩ মুক্তিযোদ্ধা দাবিদারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠছে। এ ঘটনা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তোলপাড় চলছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মঞ্জুর হোসেন সুমন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কৌশিক সোহেল, ছাত্রলীগ নেতা মহাসিন পাটোয়ারী ও রিজভী অভিযোগ করেন, কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আলম (মঞ্জু ডাক্তার) ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করে যাচাই-বাছাই কমিটিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। এছাড়া মঞ্জু ডাক্তার পুরনো মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজাম উদ্দিন পাঠান বলেছেন, বিধিমোতাবেক ফরম পূরণ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ইউএনও শিল্পী রানী রায় বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

এছাড়া সুনামগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে।দিনাজপুরের পার্বতীপুরে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। যশোরে ৫৭জনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ৯৩জন মুক্তিযোদ্ধার তথ্যে গড়মিলের অভিযোগ উঠেছে।ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে এবং বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেযার ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা।



মন্তব্য চালু নেই