আধুনিক যুগের দশ মারণাস্ত্র
প্রস্তর যুগ আমরা পেছনে ফেলে এসেছি বহু বছর আগে। কিন্তু প্রস্তর যুগে মানুষ যা তৈরি করতে শুরু করেছিল তা আজও মানুষ তৈরি করে চলেছে। আগে যা ছিল নিতান্তই প্রকৃতির বিরুদ্ধে টিকে থাকার চেষ্টা, এখন তা হয়েছে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের টিকে থাকার চেষ্টা। আশা করছি পাঠক বুঝে নিয়েছেন, কিসের কথা বলা হচ্ছে। পাথরের সেই যুগে মানুষ অস্ত্র বানাতে শিখেছিল হিংস্র পশু থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এখন মানুষ অস্ত্র বানাচ্ছে আধিপত্য বিস্তারের জন্য। কোন দেশ কত বেশি নিখুত অস্ত্র তৈরি করতে পারে তার উপর নির্ভর করে তার আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা। এখন পর্যন্ত আমরা বিশ্বে যতগুলো উন্নত দেশ দেখতে পাই, সেগুলোর দিকে একটু ভালো করে খেয়াল করলেই আমরা দেখতে পাবো যে, তাদের সঙ্গে আমাদের মূলত পার্থক্য তেমন কোনো স্থানেই নেই একটা স্থান ছাড়া। আর তা হলো অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শিতা। যে দেশ যত ভালো অস্ত্র উৎপাদন করতে পারছে সেই দেশ ততবেশি উন্নত এবং ক্ষমতাধর।
ক্ষমতার এই নগ্ন চর্চা মানুষকে হত্যা করতেও পিছপা হয় না। গোটা পৃথিবীতে এখন এক নীরব যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদল মানুষ নিয়মিত মার খাচ্ছে, আরেক দল মানুষ ক্রমাগত অস্ত্র আর ক্ষমতার জোরে অন্যান্যদের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। আসুন পাঠক আমরা চিনে নেই ঠিক কোন কোন অস্ত্রের কেরামতিতে বিশ্বের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
এক্সএম২৫ স্মার্ট গ্রেনেড লাঞ্চার
মার্কিন বাহিনীর ব্যবহৃত এই অস্ত্রটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় আফগানিস্তানে। ভূমি থেকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য এই গ্রেনেড নিখুতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। গোটা অস্ত্রটি লেজারের সহায়তায় চলে। চলতি বছর আফগানিস্তানে এই অস্ত্রের আরো সফল প্রয়োগ হবে বলে আশা করছে মার্কিন সামরিক প্রশাসন।
অ্যাটিশন অ্যাসল্ট শটগান
১৯৭২ সালে মার্কিন কোম্পানি ম্যাক্সওয়েল অ্যাটিশন এই অস্ত্রটির ডিজাইন প্রস্তুত করে। কিন্তু ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো অস্ত্রটি ব্যবহৃত করে মার্কিন সেনাবাহিনী। এর আগের শটগানগুলোর তুলনায় এই শটগানটি অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক এবং প্রাণঘাতী। শটগানটি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় প্রতি মিনিটে ৩০০ গুলি করা সম্ভব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২০ অথবা ৩২ গুলির ম্যাগজিনও ব্যবহার করা যায়।
এমকে১৯ গ্রেনেড লাঞ্চার
১৯৬৮ সালে আবিস্কৃত এই অস্ত্রটি এখনও বেশ দাপটের সঙ্গেই ব্যবহৃত হচ্ছে মার্কিন বাহিনীতে। ভিয়েতনাম, উপসাগরীয় যুদ্ধ, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন, তুরস্ক এবং মেক্সিকোতে সফল ভাবেই এই অস্ত্রের ব্যবহার করেছে মার্কিন বাহিনী। প্রতি মিনিটে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ৩২৫ থেকে ৩৭৫ রাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে পারে এই অস্ত্র। আর এর ওজনও কম হওয়ায় সহজেই বহনযোগ্য।
এমএএআরএস রোবট
যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশের আভ্যন্তরীন গোলযোগ মেটানোর জন্য ২০০৮ সালে এই অস্ত্রটি তৈরি করে। তবে উৎপাদনের পর থেকে তেমন কোনো স্থানে এই অস্ত্রটি এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু ২০১২ সালের দিকে মেক্সিকোর এক ড্রাগ কার্টেল উৎখাতে এই অস্ত্রের সফল ব্যবহার করা হয়েছিল। অস্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানববিহীন অবস্থান চলতে পারে, যে কারণে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজেই শত্রু শিবিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যায়। ধ্বংসের পাশাপাশি স্থলমাইন খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করার কাজ করতে পারে এই রোবট।
মিনিগান
নামে মিনি হলেও কাজে মোটেও মিনি নয়। ১৯৬৩ সাল থেকে এখনও মার্কিন বাহিনী প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেই এই অস্ত্রটি ব্যবহার করে আসছে। প্রতি মিনিটে ৬ হাজার রাউন্ড পর্যন্ত গুলি ছুড়তে পারে এই মিনিগান। মার্কিন সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি শাখা এই অস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষত, মার্কিন নৌ এবং বিমান বাহিনীই সর্বাধিক মিনিগান ব্যবহার করে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিরীহ ভিয়েতনামিজদের হত্যায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল মিনিগান।
এক্সএম২০১০ এনহ্যান্সড স্নাইপার রাইফেল
আর দশটা স্নাইপার রাইফেলের তুলনায় এই রাইফেলটি ভিন্ন। যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্নাইপারটি অনেকটা নিশব্দ কামানের কাজ দেয়। কয়েক ধাপে এই অস্ত্রটির প্রস্তুত প্রণালী ২০১০ সালে শেষ হয়। বোল্ট অ্যাকশন রাইফেল হওয়ায় প্রতি ম্যাগজিনে পাঁচটি নির্দিষ্ট গুলি থাকে। তবে অন্যান্য স্নাইপার রাইফেলের তুলনায় এর গুলি অধিক ধ্বংসাত্মক এবং কার্যকর।
রেলগান
অদ্ভুত দর্শন এই অস্ত্রটিকে যুক্তরাষ্ট্রে হোমোপোলার মর্টার গান নামেও ডাকা হয়। বিদ্যুতের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট চেইনের উপর রেখে অস্ত্রটি চালাতে হয়। ২০০০ সালে মার্কিন নৌ বাহিনী পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় সাড়ে তিনকেজি ওজনের মর্টার নিক্ষেপ করে এই বন্দুক দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মর্টারের আয়তন কমিয়ে বন্দুকটির রেঞ্জ বাড়ানো হয়। প্রতি সেকেন্ডে আড়াই কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে এর গোলা।
প্রিডেটর ড্রোন
বিশ্বে অব্যর্থ অস্ত্র হিসেবে এখন সর্বাধিক পরিচিত ড্রোন বিমান। মনুষ্যবিহীন এই বিমান নিভৃতে শত্রুপক্ষের ঘাটিতে বিমান হামলা চালাতে সক্ষম। এক একটি প্রিডেটর ড্রোন কমপক্ষে ৫০০ রাউন্ড বোমা বহন করতে সক্ষম। আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধে ব্যাপক মার্কিন সৈন্য নিহত হওয়ার পরই মূলত মার্কিন অস্ত্র নির্মাতারা এই ড্রোন তৈরিতে আগ্রহী হয়। বর্তমানে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে মার্কিন ড্রোন বিমান তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে।
চিমেরা ভাইরাস
যন্ত্রাস্ত্রের আধিপত্যের এই যুগে মার্কিন বাহিনী তাদের প্রয়োজনে অনেক জীবানু অস্ত্র তৈরি করেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো চিমেরা ভাইরাস। এই ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট এলাকার অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি ছাড়াই সকল প্রাণীকে মেরে ফেলতে সক্ষম। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাসের কথা প্রকাশ্যে আনেনি। উল্টো বিভিন্ন সময় এই ভাইরাসের কথা অস্বীকার করেছে দেশটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উইকিলিকসের কল্যাণে এই ভাইরাসটির কথা জানতে পেরেছে বিশ্ববাসী।
নিউক
হিরোশিমা এবং নাগাসাকির সেই ভয়াল ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সকল অস্ত্রের প্রধান হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে পারমাণবিক বোমা। ক্ষমতাধর অধিকাংশ দেশগুলোই কিছু না কিছু পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম। এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের হাতে এই অস্ত্র রয়েছে। প্রতিবছরই পারমাণবিক বোমা বানাতে নিরুৎসাহী করার জন্য অনেক সম্মেলন সেমিনার হয়, কিন্তু উন্নত দেশগুলো কোনো কথাতেই কর্ণপাত না করে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে এবং বোমা তৈরি করছে।
মন্তব্য চালু নেই