বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হাসপাতাল

মানুষ অসুস্থ হলেই তবে হাসপাতালে যায়। সঠিক চিকিৎসা আর সেবা-যত্নের কল্যাণে অসুস্থ মানুষ হয়ে ওঠে সুস্থ মানুষ। কিন্তু পাঠক ভেবে দেখুন তো, এমন কোনো হাসপাতালের ঠিকানা যদি আপনার জানা থাকে, যেখানে রোগি ভর্তি হওয়া মানে সুস্থতার বদলে আরও অসুস্থ হওয়া তাহলে বিষয়টি কেমন হয়। সম্প্রতি একদল ক্যাম্পেইনার গুয়াতেমালার একটি হাসপাতালকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হাসপাতাল বলে অভিহিত করেছে। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছে যে, এই হাসপাতালে যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। ক্যাম্পেইনারদের ভাষায় হাসপাতালের গোটা পরিস্থিতি বর্ননা করা হলো বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য।

হাসপাতালের যেখানেই আমি তাকাচ্ছিলাম সেখানেই শুধু অচেতন মানুষ শুয়ে থাকতে দেখেছি। প্রচণ্ড সূর্যের তাপেও অনেক রোগি শুয়ে ছিল। পরে জানতে পেরেছিলাম যে প্রত্যেক রোগিকেই উচুমাত্রার ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচেতন করে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো হাসপাতালে যা আমি দেখিনি এখানে তা দেখতে পেয়েছি। বেশিরভাগ মানুষের শরীরে পোশাক ছাড়া কিছুই ছিল না। আর যাদের শরীরে পোশাক ছিল তাও যৎসামান্য। মল আর মূত্রের মাঝে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিল রোগিরা।

দ্যা ফেদ্রিকো মোরা হাসপাতালটির স্থায়ী রোগির সংখ্যা ৩৪০ জন। এদের মধ্যে ৫০ জনই মানসিকভাবে অসুস্থ এবং অপরাধী। হাসপাতালের প্রধান রোমিও মিনেরার মতে, হাসপাতালের খুব কম সংখ্যক মানুষেরই মানসিক সমস্যা রয়েছে। অন্যদিকে মিনেরা বিশ্বাস করেন যে তারা চ্যারিটি কর্মী, যারা একটি প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করছে। কিন্তু এই হাসপাতালে কোনো সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। তবে আমরা কয়েকটি মানবাধিক সংস্থার হয়ে সুপারিশ করিয়ে তবে হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারি।

হাসপাতালের মূল বিভাগে ঢোকার পর তেমন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করিনি। কিন্তু যতই সামনে আগাচ্ছিলাম ততই অস্বাভাবিক সব রোগির দেখা পাচ্ছিলাম। একজন রোগি আমাকে বলছিল যে, আমি যেন তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাই। তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো, ৭০ জন রোগির জন্য মাত্র দুজন নার্স কাজ করে। তাও আবার তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়েই পাওয়া যায় না। এই বিষয়টি নিয়ে যখন হাসপাতাল প্রধানের সঙ্গে আমাদের অনুবাদক কথা বলছিলেন তখন আমি একটি অন্ধকার ঘরের দিতে এগিয়ে যাই। সেখানে কঠিন লোহার বিছানায় শেকল দিয়ে বাধা অবস্থায় অনেককে দেখতে পাই। পরে জানতে পারলাম তাদের মল-মূত্র ত্যাগ করার জন্যও কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় না। ওই লোহার বিছানাতেই তাদের সব প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়।

হাসপাতালের সার্বিক মান নিয়ে যখন আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন তারা জানায় যে, তারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী রোগিদের খুব কম মাত্রার ঘুমের ওষুধ দেয়। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে তাদের হাসপাতালের সব নার্সই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং তারা রোগিদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে।

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হাসপাতাল2কিন্তু আমরা কর্তৃপক্ষের কথা বিশ্বাস করার চেয়ে নিজেদের চোখে সবকিছু দেখতে চাচ্ছিলাম। একটা পর্যায়ে জানতে পারলাম, রোগিদের অনেকেই হাসপাতালের গার্ডদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। একজন নারী রোগি আমাকে জানায় যে, তাকে ঘুমের মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।

তার ভাষায়, ‘আমাকে ক্রমাগত ঘুমের ওষুধ খেতে দেয়া হতো। এভাবে চলতে থাকায় আমি একটা সময় কিছুই আর মনে করতে পারতাম না। এমনকি শরীরের উপর দিয়ে কোনো অত্যাচার হলেও টের পেতাম না। রাতের আধারে গার্ডরা আমাকে ধর্ষণ করে এবং আমার পা গড়িয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’

এরকম আরও অনেক দুর্বিসহ ঘটনা ঘটে এই হাসপাতালে। রাষ্ট্র এবং সরকারের নাকের ডগায় বসে রোগিদের সঙ্গে এধরণের পাশবিক আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগিদের যত বেশিদিন হাসপাতালে রাখা যাবে ততই বাড়বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মুনাফা। আর যেহেতু এই হাসপাতালে অনেক অপরাধীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় তাই সরকারের তেমন কোনো নজরদারিও থাকে না হাসপাতালটির প্রতি। যার পূর্ণ সুবিধা গ্রহন করে রোমিওর মতো কর্মচারীরা।



মন্তব্য চালু নেই