চলতি বছর দেশে ৯৮ হিন্দুকে হত্যা
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৯৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এক হাজার ৯ জনকে। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৮ জনকে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। নিখোঁজ রয়েছেন ২২জন। প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে ২০৯টি। ৩৬৬টি মন্দিরে পূজা বন্ধ করা ও ৩৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১৫ হাজার ৫৪টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলতি বছরের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে একাধিক গণমাধ্যম ও নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ তথ্য পেয়েছে।
সম্মেলনে লিখিতভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের এ চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব আনন্দ কুমার বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ধর্ষণ, হত্যা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ ৩০টি ক্যাটাগরিতে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে আরও জানানো হয়- চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫৭ জনকে জখম, ৮ জনকে কারাগারে আটক, ৯৯জনকে চাঁদাবাজি-মারধর ও আটকে রেখে নির্যাতন, ১৬৫টি লুটপাটের ঘটনা ও বসতঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৩টি হামলা হয়েছে।
মহাসচিব আনন্দ কুমার বিশ্বাস জানান, সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে ৮৬টি। এর মধ্যে ভূমি দখল ৬১টি, ঘরবাড়ি দখল ৫টি এবং দখলের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ২০টি। উচ্ছেদে ঘটনা ঘটেছে ২১০টি, উচ্ছেদের তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে ৩২৬টি, উচ্ছেদের হুমকি তিন হাজার ৪৩১টি, দেশ ত্যাগের হুমকি ৭১১টি।
তিনি আরও জানান, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, চুরি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১৪১টি। বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, চুরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৩২৮টি। প্রতিমা ভাঙচুর ২০৯টি, প্রতিমা চুরি ২২টি, মন্দিরে পূজা বন্ধ করা হয়েছে ৩৬৬টি, অপহরণ ৩৮টি, অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭টি। গণধর্ষণ হয়েছে ৪টি। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত বা ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা এক হাজার ২৫১টি।
লিখিত বক্তব্যে বিশ্বাস জানান, ২০১৬ সাল ছিল সংখ্যালঘুদের জন্য এক নির্যাতনের বছর। আমাদের এ প্রতিবেদন কোনো দল বা ব্যক্তিকে খুশি বা অখুশির জন্য নয়। প্রকৃত সত্য আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকেসহ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, এ বছরের শুরু থেকে ধারবাহিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার কারণে বহু হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অনেকে এ বছরকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বছর হিসেবে অভিহিত করেছেন। চাকরির নামে ধর্ষণ, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, মা মেয়েকে নৌকায় তুলে একসঙ্গে ধর্ষণ, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি, মাঠ-মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরের রথের জায়গা দখল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দিনাজপুরের পূজা ধর্ষণ, সিলেটে ইসকন মন্দিরে হামলা, চট্টগ্রামে চকবারের শিব মন্দির ভাঙচুর ও দখল, প্রশাসনের সামনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্দোষ রসরাজকে মুক্তি না দিয়ে রিমান্ড দেয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়কে দেশ ত্যাগের বাধ্য করণের যে ঘটনা ঘটেছে তা শুধু ৭১এর পাক হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর লুট জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সংখ্যাঘু নির্মূল করার নীল নকশা বাস্তবায়নই ছিল মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল, প্রধান সমন্বয়কারী শ্যামল কুমার রায়, মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, যুগ্ম সহাসচিব সমীর সরকার, অখিল মণ্ডল ফনি ভূষণ হালদার প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই