‘প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই’
প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, আমরা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না। সব শিক্ষার্থীই আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ। তবে জ্ঞান অর্জনই মূল কথা। আর সব শিক্ষার্থীকে জনগণ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিবারেল অর্টস অব বাংলাদেশের (ইউল্যাব) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এক হাজার ৩২৫ জন গ্র্যাজুয়েটকে সনদ প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।
ইউল্যাবের চতুর্থ এই সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি ড. কাজী আনিস আহমেদ ও পরিচালক কাজী এনাম আহমেদ। অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের সনদের স্বীকৃতি দেন ইউল্যাবের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান। এ সময় তিনি ইউল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি কাজী আনিস আহমেদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সাফল্য কামনা করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, জীবন শুরু হয় স্বপ্ন নিয়ে এবং শেষ হয় স্মৃতি নিয়ে। আজকে তোমাদের স্বপ্নগুলো উজ্জ্বল। আজকে তোমাদের অর্জনের দিন। এই অর্জনকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি তোমাদের প্রত্যেকরই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সাফল্য কামনা করি।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘অলাভজন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিবারেল অর্টস অব বাংলাদেশ (ইউল্যাব) সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যতিক্রম। এখানে বিশেষায়িত বিষয়গুলোর সঙ্গে মানব-বিদ্যা পড়ানো হয়। দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভব্যিষতেও এই অগ্রগামিতার ধারা ধরে রাখবে ইউল্যাব। অন্য যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে আছে, তারা এই বিশ্বদ্যিালয়ের সাফল্য ও অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার শপথ নিতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশে তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, যুগোপযোগী ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া তরুণ, মেধাবী, কোমলমতি, প্রাণবন্ত ও সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা যাতে সন্ত্রাসীদের কবলে না পড়ে সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানান তিনি।
সমাবর্তন বক্তা সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সহনশীলতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। অসহনশীলতা ও অসহিঞ্চুতার প্রকাশ তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হচ্ছে। একদিকে উন্নয়নের নানা সূচকে এগিয়ে যাওয়া, স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলো দিয়ে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছে। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, অনেক বেশি কন্যাশিশু এখন বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, সমাজের একটি শ্রেণির পিছিয়ে পড়ার রুঢ় বাস্তবতাও রয়েছে।’
দেশের নারী নির্যাতন, হত্যা, গুম, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তুলে ধরে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এসব ঘটনা ঘটছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা এসব কর্মকাণ্ড করে সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে তাদের কিছু বলা যাবে না। বরং নির্যাতিতদেরই ভয়ে মুখ লুকিয়ে রাখতে হবে। ন্যয় বিচারের প্রতি আস্থা হারানোর ফলে অসহায়, দুর্বল, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু মানুষ নিজেদের আরও অরক্ষিত ভাবতে শুরু করেছে।’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সহমর্মিতার সঙ্গে একসঙ্গে বসবাসের সংস্কৃতি গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের প্রতি সংকীর্ণতা, পঙ্কিলতা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িতা থেকে মুক্ত থাকার আহবান জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা তোমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখতে চাই, পরীক্ষার্থী বা নম্বরপ্রার্থী হিসেবে নয়। আমাদের এই সত্য ধারণ করতে হবে যে, মানুষ একা নয়। বরং সবাই মিলেই তৈরি হয় মানুষ।’ এ সময় শিক্ষার্থীদের অসহিঞ্চুতা ও বৈষম্য থেকে দূরে থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘উচ্চশিক্ষাতেও আমাদের দেশে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ৯৪টি বেসরকারি ও ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিশ্বে এমন কোনও নজির নেই। তবে মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।’ মন্ত্রিসভায় অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের অনুমোদন হয়েছে জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনের সংসদ অধিবেশনে এটি পাস হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের মান নিয়েও কোনও প্রশ্ন থাকবে না।’
মন্তব্য চালু নেই