বন্ধুদের সঙ্গে সারারাত মদপান, পরদিন সকালে….

নতুন চাকরি পেয়েছিলেন মেয়েটি। ভেবেছিলেন, সেই আনন্দে কিছুটা সময় বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে কাটাবেন। কিন্তু আনন্দ বদলে গেল ট্র্যাজেডিতে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের মহেশনগরের বাসিন্দা ৩৫ বছরের সুষমা অবস্তি সঙ্গে রাত্রে বাড়ি থেকে বেরনোর আগে বলে গিয়েছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে খেতে যাচ্ছেন। পরদিন সকালে সেই বন্ধুরাই সুষমার মৃতদেহ নিয়ে হাজির হলেন দ্বারকাপুরী থানায়। সুষমাকে হত্যার অভিযোগে ওই দুই বন্ধুকে আটক করেছে পুলিশ।

দ্বারকাপুরী থানার ডিউটি অফিসার রাজীব ত্রিপাঠী পুরো ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমের সামনে ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, সুষমার হত্যাকারী সন্দেহে ধৃত দুই যুবকের মধ্যে এক জন হলেন সুদামা নগরের বাসিন্দা মনোজ ধাওয়ানি, অন্যজন সিএটি চৌমাথা এলাকায় বসবাসকারী জয়কিষণ কুরীল। পুলিশের কাছে মনোজ ও জয়কিষণ জানিয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই ছিলেন সুষমার বন্ধু।

গত ১২ ডিসেম্বর রাত্রে তাঁদের ফোন করে সুষমা জানান যে, তিনি একটি নতু‌ন চাকরি পেতে চলেছেন, এবং সেই আনন্দে পার্টি করতে চান। সুষমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিন জনে গাড়ি নিয়ে বার হন। গোপুর চৌরাহে থেকে তাঁরা মদ কেনেন, আর সিএটি চৌরাহা এলাকা থেকে কেনেন মদের সঙ্গে খাওয়ার উপযোগী নোনতা খাবার। চলন্ত গাড়িতে শুরু হয় মদ্যপান। প্রচুর মদ খেতে থাকেন সুষমাও। এর পর তাঁদের গাড়ি গোল চৌরাহেতে পৌঁছয়। সেখান থেকে খাবার প্যাক করিয়ে নেন তিন জন।

তারপরে যান একটি ধাবাতে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুষমা। ধাবায় খাওয়াদাওয়া মেটার পরে অসুস্থ সুষমা নাকি বাড়ি ফিরতে চাননি। তখন তিন জন গাড়ি নিয়ে পৌঁছন সূর্যদেব নগর এলাকার একটি মাঠে। সেখানেই গাড়ি থামিয়ে গাড়ির ভিতরে রাত্রিযাপন করেন তাঁরা। পরদিন সকালে চৈতারাম মণ্ডি হয়ে গাড়ি পৌঁছয় একটি পেট্রল পাম্পে। তখনও সুষমা উঠছেন না দেখে তাঁকে জাগানোর চেষ্টা করেন মনোজ ও জয়কিষণ। তখনই আবিষ্কার করেন যে, সুষমা মারা গিয়েছেন।

মনোজ আর জয়কিষণের দাবি, এরপর দিশেহারা হয়ে গিয়ে তাঁরা নাকি নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের ফোন করা শুরু করেন। বন্ধুরাই পরামর্শ দেন যে, সুষমার মৃতদেহ-সহ থানায় পৌঁছনোই বিধেয়। তখনই মৃত সুষমাকে গাড়িতে নিয়ে দ্বারকাপুরী থানায় যান দু’জন।

মনোজ আর জয়কিষণ দাবি করেছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই মৃত্যু হয়েছে সুষমার। যদিও এএসপি রূপেশ দ্বিবেদি জানান, শর্ট পোস্টমর্টেমের পরে জানা গিয়েছে, শ্বাসরোধের ফলে সুষমা মারা গিয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, মনোজ আর জয়কিষণই গলা টিপে হত্যা করেছেন সুষমাকে। যদিও নিজের বমিতে শ্বাসরোধ হয়ে সুষমার মৃত্যুর সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।

সুষমা রিটায়ার্ড এসডিপিও নরেন্দ্র অবস্তির কন্যা। বর্তমানে অবশ্য সুষমার মা তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন। এর আগে দিদি শক্তির সঙ্গে সুষমা একটি কনস্ট্রাকশন বিজনেস করতেন। সম্প্রতি তিনি একটি নতুন চাকরি পেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সেই আনন্দ উদযাপনেই তিনি বার হয়েছিলেন দুই বন্ধুর সঙ্গে।

আশ্চর্যের বিষয় হল, ১২ তারিখ সারা রাত সুষমা বাড়ি না ফিরলেও তাঁর পরিবারের লোকজন পুলিশে খবর দেননি। কোনও উদ্যোগও নেননি মেয়েকে খোঁজার। জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে রাত্রি কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফিরতেন সুষমা। সেই কারণেই এবারের ঘটনায় তেমন বিচলিত বোধ করেননি তাঁরা।



মন্তব্য চালু নেই